উদ্বোধনের অপেক্ষায় আরও ৬ মেগা প্রকল্প

0
112
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

বিস্ময়করভাবে একের পর এক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিজেদের সক্ষমতার জানান দিয়ে চলেছে সরকার। অদম্য গতিতে এগিয়ে চলেছে ‘ভিশন ২০৪১’ লক্ষ্যপূরণের পথে। পদ্মা সেতু ও বঙ্গবন্ধু টানেলের মতো মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়নের পাশাপাশি দেশের যোগাযোগ অবকাঠামোয় যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে ২০২৩ জুড়ে। রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সুবাদে। উন্নয়নের আরও বার্তা আসছে নতুন বছরেও।

২০২৪-এ উদ্বোধনের তালিকায় আছে আরও ৬টি মেগা প্রকল্প। এগুলো হলো- রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র, যমুনা বঙ্গবন্ধু রেলসেতু, ডিপেন্ডেবল রানওয়ে, গাজীপুরের বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প এবং ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বাকি অংশ।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র : ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দিয়ে বিশ্বের ৩৩তম দেশ হিসেবে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের এলিট ক্লাবে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ। এ বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরীক্ষামূলক ও বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাবে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট। বগুড়া ও গোপালগঞ্জে ৪০০ কেভির দুটি এবং বাঘাবাড়ির ২৩০ কেভির একটি সঞ্চালন লাইন হয়ে এ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র : কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপের মাতারবাড়ীতে ১ হাজার ৬০০ একরের পরিত্যক্ত লবণ মাঠে নির্মাণ করা হয়েছে ১২০০ মেগাওয়াট ধারণক্ষমতার কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। এ মেগা প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৫১ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা দিয়েছে প্রায় ৪৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকার ও কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) নিজস্ব তহবিল থেকে অবশিষ্ট ৭ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ২০২৩ সালের নভেম্বরে প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। ২০২৪ সালের এপ্রিলে দ্বিতীয় ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম হবে।

যমুনা বঙ্গবন্ধু রেলসেতু : চলতি বছর দেশের রেলপথে সংযুক্ত হতে যাচ্ছে যমুনা বঙ্গবন্ধু রেলসেতু। এটি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের দীর্ঘতম ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাকার রেলসেতু। দেশে প্রথমবারের মতো তৈরি হচ্ছে স্প্যানের ওপর সরাসরি বসানো জাপানি রেললাইন প্রযুক্তি। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির জাপানি রেললাইনের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি প্রায় ৮০ শতাংশ। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত। তবে চুক্তির মেয়াদ ৩-৪ মাস বাড়িয়ে এ বছরের ডিসেম্বরে উদ্বোধন করা হবে প্রকল্পটি।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্

ডিপেন্ডেবল রানওয়ে : হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ক্রমবর্ধমান ফ্লাইট এবং যাত্রীর চাপ সামলাতে নির্মাণ করা হয়েছে তৃতীয় টার্মিনাল। প্রকল্পটির ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় গত বছর ৭ অক্টোবর এর আংশিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি বছরের অক্টোবরে থার্ড টার্মিনালকে পুরোদমে চালু করার পরিকল্পনায় এগোচ্ছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল যোগ হওয়াতে টার্মিনাল সংকট কাটলেও চাপ বাড়বে রানওয়েতে। এমনিতে উড্ডয়নের সময় উড়োজাহাজগুলোকে অপেক্ষা করতে হয়, তার ওপর ফ্লাইট বাড়লে এই জট আরও বাড়বে। প্রয়োজন থাকলেও জায়গা সংকটে নতুন করে পূর্ণাঙ্গ রানওয়ে করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বলছে, ফ্লাইটের চাপ সামলাতে নির্মাণ করা হবে ‘ডিপেন্ডেবল রানওয়ে’। তৃতীয় টার্মিনালকে গতিশীল রাখতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ বছরই শেষ করা হবে ডিপেন্ডেবল রানওয়ের নির্মাণকাজ।

বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প : অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে ঢাকা-গাজীপুর রুটের বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প। চলতি বছরের জুনের মধ্যে এই প্রকল্পের সম্পূর্ণ কাজ শেষ হওয়ার বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গত ১৬ জানুয়ারি সেতু ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সেতুমন্ত্রী এ তথ্য জানান। প্রকল্পটি চালু হলে মাত্র ৪০ মিনিটে গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত যাতায়াত করা যাবে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজট অনেকটাই কমে যাবে। যানজট কমানোর লক্ষ্যে ‘গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট’ প্রকল্পের (বিআরটি, গাজীপুর-এয়ারপোর্ট) আওতায় ২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর একনেক বিআরটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। এরপর কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছিল। অর্থাৎ চার বছরের প্রকল্প শেষ করতে সময় লেগেছে ১২ বছর।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (বাকি অংশ) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট অংশের উদ্বোধন করেন গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর। এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট এলাকায় যাতায়াতে সময় লাগছে মাত্র ১০ মিনিট। চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত বাকি অংশের কাজ ২০২৪ সালের মধ্যেই সম্পন্ন হওয়ার কথা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.