পিরোজপুরে সন্ত্রাসী হামলায় দুই পিপিসহ পাঁচ আইনজীবী আহত

0
73
পিরোজপুর জেলা আইনজীবী সমিতি ভবন

পিরোজপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাকক্ষে দুই পক্ষের হট্টগোলের পর বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হামলায় দুই সরকারি কৌঁসুলিসহ (জিপি ও বিশেষ পিপি) পাঁচ আইনজীবী আহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা আইনজীবী সমিতির ভবনে এ ঘটনা ঘটে।

আহত আইনজীবীরা হলেন পিরোজপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি আব্দুর রাজ্জাক খান, জেলা জজ আদালতের জিপি প্রেমানন্দ হালদার, আইনজীবী সাঈদুর রহমান, আহসানুল কবির ও তরুণ ভট্টাচার্য। তাঁরা সবাই জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এমডি আউয়াল পক্ষের সমর্থক।

পিরোজপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও পিপি সরদার ফারুক আহমেদ বলেন, ‘পিরোজপুরে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা দীর্ঘদিন ধরে দ্বিধাবিভক্ত। বিভক্তির জের ধরে আজকের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচন ও দ্বন্দ্বের জেরে আমার ওপর আলাউদ্দিন খানের লোকজন হামলা করেছিল। পিরোজপুর জেলা আইনজীবী সমিতিতে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের একটি পক্ষ (সভাপতি পক্ষ) জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়ালের অনুসারী। আরেকটি পক্ষ (সাধারণ সম্পাদক পক্ষ) পিরোজপুর-১ (সদর, নাজিরপুর, ইন্দুরকানি) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের অনুসারী।’

বিবিধ কারণে নির্বাচন করা যায়নি। মুলতবি সভা ডাকার বৈধতা আমাদের রয়েছে। আইনজীবীদের ওপর কারা হামলা করেছে, আমি তাদের চিনি না।

আলাউদ্দিন খান, সভাপতি, পিরোজপুর জেলা আইনজীবী সমিতি

প্রত্যক্ষদর্শী ও আইনজীবী সমিতির কয়েকজন সদস্য জানান, গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি সমিতির সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছে। এ বছর ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সমিতির নির্বাচন শেষ করে নতুন কমিটির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার কথা ছিল। কিন্তু জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন করতে ব্যর্থ হন। আজ দুপুরে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি (মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি) মো. আলাউদ্দিন খান সমিতির সভাকক্ষে মুলতবি সভা ডাকেন। সেখানে তিনি সাধারণ সম্পাদক পক্ষের নেতাদের বাদ দিয়ে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পরিকল্পনা করেন। অপর দিকে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এমডি আউয়ালের পক্ষে সমিতির সাধারণ সদস্য এ কে এম আবদুস সহিদ একই স্থানে একই সময়ে তলবি সভা ডাকেন।

পিরোজপুরে সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত আইনজীবী সাঈদুর রহমান। বৃহস্পতিবার বিকেলে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে

সভাকক্ষে দুই পক্ষের সবাই বসার পর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি আব্দুর রাজ্জাক খান (সাধারণ সম্পাদক পক্ষের) সভাপতির মুলতবি সভা ডাকার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এ সময় দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়। একপর্যায়ে সমিতি ভবনের বাইরে থাকা একদল সন্ত্রাসী সমিতির ফটক খুলে ভেতরে ঢুকে আইনজীবীদের ওপর হামলা চালায়। এতে তিনজন আইনজীবী আহত হন। এরপর সভা পণ্ড হয়ে যায়।

সভা শেষে আব্দুর রাজ্জাক খান ও সাঈদুর রহমান রিকশাযোগে বাড়ি ফেরার পথে ফায়ার সার্ভিসের কার্যালয়ের কাছে সন্ত্রাসীরা জিআই পাইপ নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা করে। এতে সাঈদুর রহমানের দুই পা ও বাঁ হাতে আঘাত লাগে। আহত সাঈদুর রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন খান ও তাঁর এক ভাই, সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক খান আমার ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত।

সাঈদুর রহমান, হামলায় আহত আইনজীবী

পিরোজপুর সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক এ কে এম আসিফ আহমেদ বলেন, ‘সাঈদুর রহমানের দুই পা ও বাঁ হাতে গুরুতর আঘাত রয়েছে। আমরা তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা বা ঢাকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।’

জেলা আইনজীবী সমিতির সহসভাপতি জাকির হোসেন কাজী বলেন, কমিটির মেয়াদ ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ। এর আগে নির্বাচন দিতে হয়। সভাপতি মো. আলাউদ্দিন খান নির্বাচন না দিয়ে অবৈধ মুলতবি সভা ডাকেন। সভার বৈধতা নিয়ে আইনজীবীরা প্রশ্ন তুললে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা আইনজীবীদের ওপর হামলা করে। এরপর বাড়িতে যাওয়ার পথে বিশেষ পিপি আব্দুর রাজ্জাক খান ও আইনজীবী সাঈদুর রহমানের ওপর হামলা করে সন্ত্রাসীরা।

আহত আইনজীবী সাঈদুর রহমান বলেন, ‘জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন খান ও তাঁর এক ভাই, সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক খান আমার ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত।’

সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন খান ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক খান আইনজীবীদের ওপর হামলায় তাঁদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন। আলাউদ্দিন খান বলেন, ‘বিবিধ কারণে নির্বাচন করা যায়নি। মুলতবি সভা ডাকার বৈধতা আমাদের রয়েছে। আইনজীবীদের ওপর কারা হামলা করেছে, আমি তাদের চিনি না।’

সাধারণ সম্পাদক এমডি আউয়াল বলেন, ‘আইনজীবীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হবে। মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশিকুজ্জামান সন্ধ্যা সাতটার দিকে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি, পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

২০২৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুটি প্যানেল থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৬ প্রার্থী নির্বাচিত হন। অপর দিকে বিএনপি সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী ঐক্য পরিষদ প্যানেল থেকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ তিন প্রার্থী নির্বাচিত হন। নির্বাচনে সভাপতি পদে মো. আলাউদ্দিনসহ ১১টি পদে আওয়ামী লীগ সমর্থক বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। সাধারণ সম্পাদক এম ডি আউয়ালসহ পাঁচটি পদে আওয়ামী লীগ সমর্থক আরেকটি প্যানেল সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের প্রার্থীরা নির্বাচিত হন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.