আকাশ মেঘলা, কখনো নামে হালকা বৃষ্টি। সেই বৃষ্টি ছিটকে এসে লাগে গায়ে। এমন সময়ে কাপ্তাই হ্রদের মাঝখানে আপনি—হ্রদের জলরাশি আর দুই পাশের পাহাড়। এমন অভিজ্ঞতা নিতে ঈদের ছুটিতে ঘুরে বেড়াতে পারেন রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের হাউসবোটে ।
হাউস বোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই হ্রদে থাকা ১৫টি হাউসবোটের মধ্যে এবারের ঈদ উপলক্ষে ১২টি সচল রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে ৯০ শতাংশ হাউসবোট আগাম ভাড়া হয়ে গেছে। ৮ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটি ঘিরে বুকিং নেওয়া হয়েছে।
গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে হাউসবোটের আগাম বুকিং শুরু হয়। ৪ জুন পর্যন্ত ৯০ শতাংশ বুকিং সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন। যেভাবে আগাম বুকিং চলছে, তাতে ১-২ দিনের মধ্যে শতভাগ বোট ভাড়া হয়ে যাবে বলে ধারণা মালিকদের।
জনপ্রিয় হয়ে উঠছে হাউসবোট
কাপ্তাই হ্রদে হাউসবোট ব্যবসা শুরু হয় ২০১৯ সালে ‘প্রমোদিনী’ নামে একটি বোট চালুর মধ্য দিয়ে। পরে ‘মাউরুম’, ‘রাঙাতরী’, ‘স্বপ্নডিঙি’সহ যুক্ত হয়েছে আরও বোট। বর্তমানে এখানে চালু আছে ১৫টি হাউসবোট, যার প্রায় সবই দ্বিতল।
হাউসবোটে এক দিন, এক রাত অথবা দুই দিন এক রাতের প্যাকেজে ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে। প্যাকেজে সাধারণত ঘুমানোর জন্য ৬টি কক্ষে ১২ জন থাকার ব্যবস্থা থাকে। ভাড়ার মধ্যে থাকে খাবার ও হ্রদজুড়ে ঘোরাঘুরি। চুক্তিভিত্তিক ভাড়ার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, ২৫ জন পর্যন্ত পর্যটক একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া, ভ্রমণসুবিধাসহ এক রাত এক দিনের জন্য হাউসবোট ভাড়া পড়ে ৫০ হাজার টাকা। খাওয়া বাদ দিয়ে শুধু বোট ভাড়া ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। পুরো বোট দুই দিন এক রাতের প্যাকেজে নিলে খরচ হয় ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা।
ঘাট, খাবার ও বিনোদনের সুযোগ
রাঙামাটি শহরের পর্যটন কমপ্লেক্স ঘাট, শহীদ মিনার ঘাট, রিজার্ভ বাজার লঞ্চঘাট, সমতা ঘাট, রাজবাড়ি ঘাট ও শিল্পকলা ঘাট থেকে হাউসবোটে ওঠা যায়। এসব বোট কাপ্তাই হ্রদের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান—সুবলং ঝরনা, দ্বীপ, ভিউ পয়েন্ট ও রেস্টুরেন্টে ভ্রমণ করিয়ে আনে।
প্রতিটি হাউসবোটে আধুনিক শৌচাগার, ডাইনিং, দাবা-লুডু খেলার ব্যবস্থা এবং উন্নত মানের খাবার দেওয়া হয়। সকালে খিচুড়ি, ডিম, চাটনি ও চা, দুপুরে ভাত, বাঁশে রান্না করা মুরগি, সবজি, ডাল ও সালাদ, বিকেলে চা, বিস্কুট বা মুড়িমাখা এবং রাতে চিকেন বারবিকিউ পরিবেশন করা হয়। পর্যটকদের চাহিদা অনুযায়ী পাহাড়ি সবজি ও হ্রদের মাছও যোগ করা হয়।
‘এবারের ঈদে আগাম বুকিং বেড়েছে’
‘রাঙাতরী’ হাউসবোটের মালিক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার বোট ৯ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত পুরোপুরি বুকিং হয়ে গেছে। এমন আগাম বুকিং আগে কখনো হয়নি।’
‘প্রমোদিনী বোট লাইফ’-এর মালিক নীপাঞ্জন দেওয়ান বলেন, ‘আমাদের চারটি হাউসবোট আছে, সব কটিই ৮ থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত ভাড়া হয়ে গেছে। অনেকেই এখনো ফোন করছেন, কিন্তু আর বুকিং নিতে পারছি না।’
হাউস বোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বাপ্পি তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘আমার নিজের বোট ৮ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত ভাড়া হয়ে গেছে। অন্য বোটগুলোও একই অবস্থা। কেউ যদি এখন বুকিং না নিয়ে ঘুরতে চান, তাঁদের পক্ষে ঈদের সময় হাউস বোট পাওয়া কঠিন হবে।’
            

















