‘ঈদের আগে এত ফাঁকা গাবতলী দেখিনি’

0
100

আজ শুক্রবার চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল শনিবার দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপিত হবে। এ হিসাবে ঈদযাত্রার শেষ দিন আজ। শেষ দিনেও অনেকে ঢাকা ছাড়ছেন। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় বাস টার্মিনালে ঘর ফিরতি মানুষের উপস্থিতি কম। গাবতলী বাস টার্মিনালে শেষ সময়ে যাত্রী নেই বললেই চলে। বাসের লোকজন ডাকাডাকি করেও যাত্রী পাচ্ছেন না।

আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুই ঘণ্টা গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকা ঘুরে যাত্রী ও বাস কাউন্টারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। দেখা যায়, ঈদের আগের দিন হিসেবে অন্য বছর যে উপচে পড়া ভিড় থাকে, এবার গাবতলীতে সে চিত্র নেই। খুলনা, যশোর, মাগুরার পথে যাতায়াতকারী বাসের কাউন্টারের লোকজন ডেকেও যাত্রী পাচ্ছেন না। তুলনামূলক কিছু বেশি যাত্রী রয়েছে গাইবান্ধা, বগুড়ার মতো উত্তরবঙ্গের পথে।

যশোর-খুলনা পথে চলাচলকারী দ্রুতি পরিবহনের একটি বাস ছাড়বে বেলা সাড়ে ১১টায়। এই কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে দুই-তিনজন মিলে যাত্রী ডাকছিলেন। এই কাউন্টারের মাস্টার নুরুল আজম বলেন, ‘ঈদের আগের দিন বাস ভরতে যাত্রী ডাকা লাগছে, এমন অবস্থা গাবতলীতে কোনো দিন দেখি নাই। আগে টিকিটের জন্য কাড়াকাড়ি পড়ে যেত। আর এখন বাসের সব সিট ভরতেই কষ্ট।’ তিনি জানান, সকাল থেকে দ্রুতি পরিবহনের তিনটি বাস ছেড়েছে। সকালের দুটি বাসের সব আসনেই যাত্রী ছিল।

মিরপুর-১২ নম্বর থেকে ছেলেকে নিয়ে কাউন্টারে এসেছেন রমজান আলী। দ্রুতি পরিবহনে খুলনার দুটি টিকিট কাটলেন ১ হাজার ৬০০ টাকায়। আগে এই টিকিটের দাম ছিল ৬৫০-৭০০ টাকা। রমজান আলী বলেন, ‘ঈদের আগে গাবতলী আসামাত্র টিকিট পেয়ে যাব, এটা তো ভাবতেই পারিনি। এসে দেখি কাউন্টার ফাঁকা। দুই টিকিটে ২০০ টাকা বেশি নিল।’

ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম পরিবারের চার সদস্য মিলে যাবেন রাজবাড়ী। রাবেয়া পরিবহনের টিকিট নিয়েছেন। প্রতি টিকিট ৫২০ টাকা পড়েছে। অন্য সময়ে এই টিকিটের দাম ৪৫০ টাকা। জাহাঙ্গীর বলেন, ‘ছুটি লম্বা হওয়ায় অধিকাংশ মানুষ আগেই চলে গেছেন। ঈদের সময় এমন ফাঁকা গাবতলী আগে দেখিনি। আগে তো টিকিট পাওয়াই যেত না। আর এবার কাউন্টার থেকে ডেকে টিকিট দিল।’

গাবতলী বাস টার্মিনালের বাইরে থেকে পাটুরিয়া ফেরিঘাটের উদ্দেশে বাস ছেড়ে যায়। সেলফি পরিবহনের একাধিক বাস যাত্রী তুলছিল। গাবতলী থেকে পাটুরিয়া পর্যন্ত ভাড়া যাত্রীপ্রতি ২০০ টাকা। আনিস রহমান নামের এক যাত্রী বলেন, ‘আগে পাটুরিয়ার ভাড়া ছিল ১০০-১২০ টাকা। এখন ১৫০ টাকা পর্যন্ত বললাম। কিন্তু সব বাসে এক রেট, ২০০ টাকা।’

হাজারীবাগ এলাকা থেকে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে টার্মিনালে এসেছেন মো. আলমগীর। যাবেন রাজশাহী। তিনি বলেন, ‘৮৩০ টাকা করে দুটি টিকিট কেটেছি। প্রতি টিকিটে ১০০ টাকা বেশি নিয়েছে। অন্য বছর এর থেকে বেশি নেয়। যাত্রী না থাকায় এবার কম নিল। কাউন্টারে ভিড় নেই, মানুষজন একদম কম।’

গাবতলী থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলো ফেরি পারাপার হয়ে যায়। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সায়েদাবাদ হয়ে এই গন্তব্যে যেতে সময় লাগে কম। তাই গাবতলী টার্মিনালে এই পথের যাত্রী আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে।

নদীয়া ডিল্যাক্স পরিবহনের একটি বাস যশোর-খুলনার উদ্দেশে ছাড়বে দুপুর ১২টায়। শেষ মুহূর্তে কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে যাত্রী ডাকছিলেন দুজন। তাঁদের একজন মো. ইয়াসিন বলেন, ‘বাস ছাড়ার ১৫ মিনিট বাকি। এখনো বাসের কয়েকটা সিট ফাঁকা আছে। ঈদের আগের দিন বাস ভরতে যাত্রী ডেকে আনতে হচ্ছে, এটা আগে কখনো হয়নি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এই পথে যাত্রী কমে গেছে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.