জাপানে তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে সবচেয়ে বেশি হারে

0
120
ফ্যাক্টরিতে পেশাক তৈরি।

তৈরি পোশাকের রপ্তানিতে অন্যতম সম্ভাবনাময় বাজার জাপান। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) আলোচিত বাজারগুলোর মধ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে জাপানেই রপ্তানি বেড়েছে সবচেয়ে বেশি হারে। চলতি অর্থবছরের গত ৯ মাসে অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে একমাত্র জাপানেই রপ্তানি ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। ২০২৫ সাল নাগাদ রপ্তানি দ্বিগুণ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের সফরে গতকাল জাপান পৌঁছেছেন। সফরে অন্তত ৮টি সমঝোতা চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে শুল্ক সুবিধার বিষয়ও রয়েছে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখতে দুই দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য অন্যদের সঙ্গে বস্ত্র ও পোশাক খাতের তিন সংগঠন বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান ও বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন। সরকারি পর্যায় ছাড়াও স্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গেও এ বিষয়ে বৈঠক করবেন তাঁরা।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির সাম্প্রতিক এক সেমিনারে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হলে জাপানের বাজারে বাংলাদেশের প্রধান পণ্য তৈরি পোশাকে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ শুল্ক-কর আরোপ হতে পারে। রপ্তানির ধারা অব্যাহত রাখতে এফটিএ করা উচিত।

জাপানে রপ্তানি বৃদ্ধি এবং আগামীর সম্ভাবনার বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, বিজিএমইএ’র নিজস্ব গবেষণায় দেখা গেছে, আগামী বছরগুলোতে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় বাজার হিসেবে জাপান শীর্ষে রয়েছে। সে হিসেবে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে জাপানে রপ্তানি বর্তমানের দ্বিগুণ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন তাঁরা। এ জন্য পণ্য উন্নয়নের পাশাপাশি দেশটির ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কয়েক দফা সফর বিনিময়ও হয়েছে। মূলত ম্যানমেইড ফাইবারের পোশাকে বিনিয়োগ বাড়ানোর ফলেই জাপানে রপ্তানি এত বেড়েছে। জাপানে এ ধরনের ওভেন পোশাকের চাহিদা বেশি। এছাড়া চায়না প্লাস নীতিরও একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। পোশাক রপ্তানি থেকে ক্রমে সরে আসছে চীন। চীনের বিকল্প হিসেবে অন্যান্য দেশ থেকে পোশাক আমদানিকে চায়না প্লাস নীতির কথা বলা হচ্ছে। এলডিসির পরও রপ্তানি ধরে রাখতে প্রধানমন্ত্রীর সফরে সরকারি পর্যায়ের আলোচনায় এফটিএ গুরুত্ব পাবে। এছাড়া বেসরকারি পর্যায়ের আলোচনায়ও বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হবে।

এক সময় জাপানে পোশাক রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে তিন স্তরে উৎসবিধির শর্ত ছিল। শুধু তুলাই আমদানি করা যেত। আমদানি করা তুলায় সুতা, সুতা থেকে কাপড় ও কাপড় থেকে পোশাক উৎপাদন করতে হতো। এ শর্তের কারণে জাপানে রপ্তানি সম্ভাবনা বাধার মুখে পড়ে। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের সময় উৎসবিধির শর্ত শিথিলের ঘোষণা দেয় জাপান সরকার। এরপর থেকে রপ্তানি বাড়তে শুরু করে।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত গত ৯ মাসে প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ শতাংশ কমেছে। ২৭ জাতির জোট ইইউতেও প্রবৃদ্ধি কিছুটা কম। এরমধ্যে জাপানে রপ্তানি বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে ১২২ কোটি ডলারের পোশাক, যা অপ্রচলিত বাজারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গত অর্থবছরই ১০০ কোটি ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়ে ১১০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয় দেশটিতে। ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাকে প্রচলিত বাজার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাকি দেশগুলোকে অপ্রচলিত বাজার হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। অস্ট্রেলিয়া, ভারত, চীন ও রাশিয়া এই শ্রেণির প্রধান বাজার।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.