পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে লাভরভ বলেন, ‘এসব দেশ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর তিনি (জেলেনস্কি) পশ্চিমাদের হয়ে কাজ করেন। এ জন্য অল্প সময়ের মধ্যে ইউক্রেন সংকট বৈশ্বিক রূপ পেয়েছে।’
লাভরভের অভিযোগ, ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার ঐতিহাসিক মিত্রতা ধ্বংস করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, ‘এটাই যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্য। তাই দেশটি ইউক্রেন সংকটের প্রধান সুবিধাভোগী। আর যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো এ কৌশলগত উদ্দেশ্য পূরণে যেকোনো মূল্যে রাশিয়াকে দুর্বল কিংবা ধ্বংস করতে চাইছে।’
লাভরভ মনে করছেন, ইউক্রেনে চলমান সংঘাত শিগগিরই থামবে না। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে দায়ী করেছেন তিনি। লাভরভ বলেন, ‘ইউক্রেনে সংঘাত জিইয়ে রাখতে ওয়াশিংটন সম্ভাব্য সবকিছু করছে। এমনকি এ সংঘাতকে আরও ভয়াবহ রূপ দিতে চাইছে পেন্টাগন। আর এটা করা হচ্ছে মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্পকে চাঙা করার জন্য।’
যুদ্ধ বন্ধের উপায় সম্পর্কে সের্গেই লাভরভ আরও বলেন, বেসামরিকীকরণ ও নাৎসিবাদ থেকে বেরিয়ে আসতে রাশিয়ার প্রস্তাব ইউক্রেন ভালো করেই জানে। এ প্রস্তাব বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব ইউক্রেন সরকারের। তা না হলে রাশিয়ার সেনাবাহিনী এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
৯০ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন: জেলেনস্কি
ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী গতকাল জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ইউক্রেনে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ও ৪৪টি রকেট ছুড়েছে রুশ বাহিনী। এসব হামলায় বাখমুত ও আভদিভকায় বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
রুশ হামলার জেরে ইউক্রেনের প্রায় ৯০ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। গতকাল সোমবার রাতে এক ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, বড়দিনের উৎসবের মধ্যেও বিদ্যুৎ সরবরাহের জাতীয় গ্রিড মেরামতে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জেলেনস্কি আরও জানান, পূর্বাঞ্চলের দনবাসে যুদ্ধ পরিস্থিতি বেশ জটিল হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া ইউক্রেন সরকারের পক্ষ থেকে গতকাল জানানো হয়েছে, দেশটির লুহানস্ক ও দোনেৎস্কের বিভিন্ন এলাকায় রাশিয়ার সঙ্গে জোরদার যুদ্ধ চলছে। এ ছাড়া যুদ্ধক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন অমান্যের অভিযোগ তুলে রাশিয়াকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জেলেনস্কি।
বেলারুশে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন
প্রতিবেশী দেশ বেলারুশে ‘ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা’ এবং ‘এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা’ মোতায়েন করেছে রাশিয়া। বেলারুশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাতে আজ বিভিন্ন পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
পারমাণবিক বোমা ও ড্রোন বহনে সক্ষম ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র ৫০০ কিলোমিটার (৩০০ মাইল) পর্যন্ত দূরের লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে। বেলারুশের রাজধানী মিনস্ক থেকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার বিভিন্ন এলাকায় এ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানতে পারবে। বেলারুশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের সেনারা রাশিয়া-বেলারুশের যৌথ প্রশিক্ষণ শেষ করেছে। ইস্কান্দার এবং এস-৪০০ ব্যবস্থা পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে।’
পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম কতগুলো ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র বেলারুশে রাশিয়া মোতায়েন করেছে তার সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি। এর আগে গত জুনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছিলেন, মিনস্ককে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মোতায়েন করবে মস্কো।