ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে নতুন মৌসুম শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে নতুন এই মৌসুমে নতুন ক্লাবে অভিষিক্ত হয়েছেন বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়। ট্রান্সফারমার্কেট প্রিমিয়ার লিগের শুরুর সপ্তাহে নতুন সই করা এসব খেলোয়াড়দের ভেতর থেকে মাঠে আলো ছড়ানো পাঁচজনকে বাছাই করেছে। আসুন জেনে নিই—
তিজানি রেইন্ডার্স (ম্যানচেস্টার সিটি)
উলভসের মাঠে ৪-০ গোলের জয়ে দারুণ শুরু করেছে ম্যানচেস্টার সিটি। ফ্রান্সে জন্ম নেওয়া আলজেরিয়া জাতীয় দলের লেফট ব্যাক রায়ান এইত-নুরি এ ম্যাচে সিটির হয়ে ভালো খেলেছেন। বেঞ্চ থেকে নেমে দারুণ এক গোলও করেছেন সিটির ফরাসি অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার রায়ান শেরকি। কিন্তু ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় নিঃসন্দেহে সিটির ডাচ মিডফিল্ডার তিজানি রেইন্ডার্স। মাঠের কোথায় ছিলেন না তিনি! পেপ গার্দিওলার দলে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন এসি মিলান থেকে ৪ কোটি ৬৫ লাখ পাউন্ডে সিটিতে যোগ দেওয়া এই ২৭ বছর বয়সী খেলোয়াড়। দারুণ ফিনিশিংয়ে একটি গোল করার পাশাপাশি আর্লিং হলান্ডকে দিয়েও গোল করান রেইন্ডার্স। দুরন্ত কিছু মুভে উলভসের রক্ষণকে বেশ কয়েকবার ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলেছেন। তাঁর খেলা দেখে রোমাঞ্চ অনুভব করেছেন সিটির সমর্থকেরাও।

উগো একিতিকে (লিভারপুল)
অ্যানফিল্ডে বোর্নমাউথকে ৪-২ গোলে হারিয়ে লিভারপুলও ভালো শুরু পেয়েছে। তবে আধিপত্য দেখিয়ে জয় তুলে নেওয়া বলতে যেটা বোঝায়, সেটা দেখাতে পারেনি আর্নে স্লটের দল। লিভারপুলের নতুন লেফট ব্যাক মিলোস কেরকেজ তাঁর সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে ভুগেছেন। রাইট ব্যাকে রক্ষণ সামলাতে জেরেমি ফ্রিমপংয়ের দুর্বলতাও সবার চোখে পড়েছে। তবে ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে ৭ কোটি ৯০ লাখ পাউন্ডে লিভারপুলে যোগ দেওয়া ফরাসি স্ট্রাইকার একিতিকে ঠিকই আলো ছড়িয়েছেন। ইংল্যান্ডের শীর্ষ লিগে অভিষেক ম্যাচেই প্রতিপক্ষের রক্ষণে ত্রাসের সঞ্চার করেছেন। তাতে নিজে যেমন গোল পেয়েছেন, তেমনি কোডি গাকপোকে দিয়েও গোল করিয়েছেন। সতীর্থদের সঙ্গে ‘লিংক’ করে খেলায় বিশেষভাবে চোখে পড়েছে তাঁকে। লিভারপুলের নতুন চেহারার আক্রমণভাগে একিতিকের ওপর এখনই ভরসা রাখতে শুরু করেছেন অনেকেই।
রেইনালদো (সান্ডারল্যান্ড)
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের উদ্বোধনী দিনে ওয়েস্ট হামকে ৩-০ গোলে হারায় সান্ডারল্যান্ড। এ ম্যাচে নতুন সই করা আট খেলোয়াড়কে রেখে তারা একাদশ সাজায়। সেখান থেকে একাধিক খেলোয়াড়কেই বাছাই করা যায়। গ্রানিত জাকা ও হাবিব দিয়ারা যেমন মিডফিল্ডে ভালো খেলেছেন। তবে আতলেতিকো মাদ্রিদ থেকে ফ্রি এজেন্ট হিসেবে সান্ডারল্যান্ডে যোগ দেওয়া রেইনালদো যেন ‘চীনের প্রাচীর’ হয়ে ছিলেন রক্ষণে। মোজাম্বিকের ৩১ বছর বয়সী এই লেফট ব্যাকের অভিজ্ঞতার ভালো সুফল পেয়েছে ক্লাবটি। অপ্টার হিসাবে, এই ম্যাচে ট্যাকল করায় শতভাগ সফল ছিলেন রেইনালদো। চারবার বিপদ থেকে বল ‘ক্লিয়ার’ করার পাশাপাশি দুবার প্রতিপক্ষের পাস কেড়েছেন। সান্ডারল্যান্ডের আর কোনো খেলোয়াড় রেইনালদোর (৬৩) চেয়ে বেশি বল স্পর্শ করতে পারেননি।

মোহাম্মেদ কুদুস (টটেনহাম)
বার্নলিকে ৩-০ গোলে হারিয়ে টটেনহাম কোচ হিসেবে ভালো শুরু পেয়েছেন টমাস ফ্রাঙ্ক। ওয়েস্ট হাম থেকে ৫ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ডে টটেনহামে যোগ দেওয়া ২৫ বছর বয়সী মিডফিল্ডার কুদুস এই জয়ে দারুণ ভূমিকা রাখেন। রিচার্লিসনকে দিয়ে দুটি গোল করানোর পাশাপাশি রক্ষণে নেমেও সতীর্থদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বার্নলির আক্রমণ ঠেকান। কুদুসকে প্রথম ম্যাচেই এত ভালো ফর্মে দেখে টটেনহামের ভক্তরা আশায় বুক বাঁধতেই পারেন।
মাতেউস কুনিয়া (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড)
গোল করেননি। গোলও করাননি। তাঁর দলও হেরেছে। এমন খেলোয়াড়কে এই তালিকায় রাখা একটু অদ্ভুত লাগতেই পারে। তবে আর্সেনালের বিপক্ষে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ১-০ গোলে হারে মৌসুম শুরুর ম্যাচে মাতেউস কুনিয়াই সেরা খেলোয়াড়। উলভারহ্যাম্পটন থেকে গত জুনে ৬ কোটি ২৫ লাখ পাউন্ডে ইউনাইটেডে যোগ দেন এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। প্রিমিয়ার লিগে নিজের অভিষেক ম্যাচে প্রতিভার ঝলক দেখিয়েও গোল না পাওয়াটা তাঁর জন্য দুর্ভাগ্যজনক। মাঝমাঠে আর্সেনাল ডিফেন্ডার বেন হোয়াইটকে ফ্লিক করে যেভাবে বোকা বানিয়েছেন, সেটা স্রেফ বিশ্বমানের। আরেকবার বল পায়ে একাই দৌড়ে আরেকটু হলে ‘মৌসুমের সেরা গোল’ করে ফেলতেন। শুরুটা ইউনাইটেডের জন্য ভালো না হলেও কুনিয়াকে নিয়ে আশায় বুক বাঁধতেই পারেন ক্লাবটির সমর্থকেরা।