মস্কোর বড় আঘাত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ

0
100
রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের হামলায় শুক্রবার দক্ষিণ কিয়েভের উমানে একটি আবাসিক ভবনের একাংশ ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর অভিযান চালায় ইউক্রেনের উদ্ধারকর্মীরা। ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয় একের পর এক লাশ-এএফপি

প্রায় দুই মাস অনেকটা শান্ত থাকার পর ফের ইউক্রেনে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। গতকাল শুক্রবার ভোরের আলো ফোটার আগে রাজধানী কিয়েভ, মধ্যাঞ্চলীয় উমান এবং ডিনিপ্রো শহরে একের পর এক বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় দেশটি। এতে নিহত হয়েছে অন্তত ১৯ জন। এর মধ্যে শুধু উমানেই প্রাণ গেছে ১৭ জনের। এখানে আবাসিক ভবনে হামলা হওয়ায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে, ভয়াবহ এই হামলার পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুত ইউক্রেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট রাশিয়ার ওপর আরও বেশি নিষেধাজ্ঞা দিতে মিত্রদের প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়েছেন। তবে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, ইউক্রেনের সামরিক রিজার্ভ ইউনিটগুলো ধ্বংস করতেই এ হামলা চালানো হয়েছে। খবর বিবিসি ও গার্ডিয়ানের।

ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানান, উমানের কেন্দ্রীয় শহরের বহুতল ভবনে হামলায় এক শিশুসহ ১৭ জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় মেয়র জানান, ডিনিপ্রো শহরে এক মা ও তাঁর শিশুকন্যা নিহত হয়েছে। উমানের আবাসিক এলাকাটিতে প্রায় ৮০ হাজার মানুষের বসবাস। সেখানে চলছে উদ্ধার অভিযান।

রুশ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আরআইএ বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়, গতকালের হামলায় রাশিয়ার লক্ষ্য ছিল রিজার্ভ ইউনিটগুলো। রুশ বাহিনী এদিন নির্ভুল লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে– এমন অস্ত্র ব্যবহার করেছে।

ভয়াবহ হামলার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি  বলেছেন, উমানে অন্তত ১০টি আবাসিক ভবনে হামলা চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, এসব হামলা বলছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, রাশিয়াকে থামাতে বিশ্বব্যাপী নিষেধাজ্ঞা অবশ্যই বাড়ানো উচিত। এ ছাড়া, এসব হামলা রাশিয়ায় ব্যর্থ ও শাস্তির মুখোমুখি করবে বলেও দাবি করেন তিনি।

কিয়েভের সামরিক প্রশাসনের প্রধান জানিয়েছেন, ৫১ দিনের মাথায় রাজধানীতে প্রথম রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ছিল এটি। তবে এখানে কেউ হাতাহত হয়নি।
রুশ বাহিনীর ছোড়া ৩২ ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ২১টি এবং দুটি ড্রোন ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার  মাধ্যমে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এর মধ্যে কিয়েভে ৯টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা হয়েছে বলে জানান তাঁরা।

এদিকে, এই হামলার জবাব দিতে প্রস্তুত ইউক্রেনীয় বাহিনী। পশ্চিমা মিত্রদের সরবরাহ করা ট্যাঙ্ক ও নতুন সরঞ্জামসহ পাল্টা হামলা চালানো হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ শুক্রবার অনলাইন ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘স্রষ্টার ইচ্ছা, আবহাওয়া আর কমান্ডারদের সিদ্ধান্তের পরই হামলা শুরু হবে।’
কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর বাখমুতের নিয়ন্ত্রণের জন্য দীর্ঘ ১০ মাসের যুদ্ধ এবং শীতকালীন আক্রমণের মাধ্যমে সামনে এগোতে লড়াই চালিয়েছে রাশিয়া। এরই মধ্যে শহরটি ধ্বংস হয়ে গেছে। সেই শহরই গতকাল পরিদর্শন করেছেন রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী মারাত খুশনুলিন। সফরকালে অঞ্চলটি ফের নির্মাণ করা হবে বলে জানান তিনি।

রুশ বাহিনীর ইউক্রেনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে জাতিসংঘ। গুম, নির্যাতন, ধর্ষণ এবং বিচারবহির্ভূত মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিগত বৈষম্য দূরীকরণ কমিটি।

এক বিবৃতিতে কিমিটি বলেছে, বল প্রয়োগ, নির্বিচারে আটক, হত্যা এবং ইউক্রেন থেকে শিশুদের জোরপূর্বক রাশিয়ায় স্থানান্তরসহ নানা অভিযোগ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তবে, শিশুদের রাশিয়ায় স্থানান্তরের বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে মস্কো। তাদের দাবি, যুদ্ধ থেকে নিরাপদ রাখতেই তাদের সরিয়ে নিয়েছে মস্কো।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.