ব্যবসায়ীদের ব্যাংক ঋণ শোধে আরও ছাড়

0
122
বাংলাদেশ ব্যাংক

ব্যবসায়ীদের ঋণ পরিশোধে আরও ছাড় দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বড় শিল্পের মেয়াদি ঋণে চলতি বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে যে পরিমাণ কিস্তি দেওয়ার কথা, তার ৫০ শতাংশ দিলে খেলাপি হিসেবে গণ্য হবেন না। বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন এক সময়ে বড় ছাড় দিল, যখন ব্যাংকগুলোর আদায় বাড়তে শুরু করেছে। এর আগের নির্দেশনায় অন্তত ৭৫ শতাংশ পরিশোধ করলে খেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ ছিল।

করোনাভাইরাসের প্রভাব শুরুর পর ২০২০ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঢালাও সুবিধার কারণে কেউ ১ টাকা পরিশোধ না করলেও খেলাপি হননি। ২০২১ সালে ১৫ শতাংশ দিলেই ঋণ নিয়মিত দেখানো হয়েছে। চলতি বছরের জুনের এক নির্দেশনায় শর্ত সাপেক্ষে কিছু সুযোগ ঘোষণা করা হয়। শিথিলতার মধ্যেও প্রথম ৯ মাসে খেলাপি ঋণ ৩১ হাজার ১২২ কোটি টাকা বা ৩০ দশমিক ১৪ শতাংশ বেড়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা।

রোববার প্রজ্ঞাপনে বৃহৎ শিল্পের মেয়াদি ঋণের কিস্তি পরিশোধের শর্ত শিথিল করে বলা হয়েছে, বহির্বিশ্বে যুদ্ধাবস্থা প্রলম্বিত হওয়ার নেতিবাচক প্রভাবে শিল্পের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। এতে করে ঋণগ্রহীতাদের প্রকৃত আয় কমেছে। এ অবস্থায় দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল রাখা এবং ঋণগ্রহীতাদের কিস্তি পরিশোধ সহজ করতে মেয়াদি ঋণের বিপরীতে গত অক্টোবর থেকে চলতি ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রদেয় কিস্তির ৫০ শতাংশ পরিশোধ করলে আর খেলাপি করা যাবে না। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এ ঋণ পরিশোধ করলে চলবে। অপরিশোধিত অংশ বিদ্যমান ঋণের পূর্ব নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী এক বছরের মধ্যে সমান কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। আবার ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে অবশিষ্ট মেয়াদকালের সঙ্গে এক বছর সময়কে বিবেচনায় নিয়ে কিস্তি পুনর্নির্ধারণ করে নতুন সূচি অনুযায়ী আদায় করা যাবে।

গত জুনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়, জাতীয় শিল্পনীতির সংজ্ঞা অনুযায়ী, ‘বৃহৎ শিল্প’ প্রতিষ্ঠানের যেসব মেয়াদি ঋণ গত ১ এপ্রিল অশ্রেণিকৃত ছিল, তার বিপরীতে জুন প্রান্তিকে প্রদেয় কিস্তির নূ্যনতম ৫০ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ৬০ শতাংশ এবং ডিসেম্বর প্রান্তিকে ৭৫ শতাংশ পরিশোধ করলে আর খেলাপি করা যাবে না। সিএমএসএমই ও কৃষি খাতের যেসব মেয়াদি ঋণ গত ১ এপ্রিল অশ্রেণিকৃত রয়েছে, তার বিপরীতে জুন প্রান্তিকে প্রদেয় কিস্তির নূ্যনতম ২৫ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ৩০ শতাংশ এবং ডিসেম্বরে ৪০ শতাংশ পরিশোধ করলে তিনি খেলাপি হবেন না। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলে এক টাকাও শোধ না করেই খেলাপিমুক্ত থাকার দাবি জানিয়ে আসছে ব্যবসায়ীদের একটি অংশ। সর্বশেষ গত ১২ ডিসেম্বর ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জুন পর্যন্ত ঋণ শোধ না করেও খেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ দাবি করেন। যদিও ব্যাংকাররা সব সময়ই ঢালাও সুবিধা না দিয়ে কেস টু কেস ভিত্তিতে সুবিধার দাবি জানিয়ে আসছেন।

শিল্প ঋণের আদায় বেড়েছে :বাংলাদেশ ব্যাংক এমন এক সময়ে এ ছাড় দিল, যখন শিল্প ঋণের বিতরণ ও আদায় বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গতকাল প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে শিল্প খাতে ১ লাখ ৩১ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ২৩ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে বৃহৎ শিল্পে মেয়াদি ঋণ বিতরণ ১৯ দশমিক ১০ শতাংশ বেড়ে ১৪ হাজার ১২০ কোটি টাকা হয়েছে। এ ছাড়া আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় শিল্প ঋণের আদায় ২২ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়ে ১ লাখ ১ হাজার ১২৮ কোটি টাকা হয়েছে। এর মধ্যে বৃহৎ শিল্পের মেয়াদি ঋণের আদায় ৫১ শতাংশের বেশি বেড়েছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে বড় শিল্পের মেয়াদি ঋণ আদায় হয়েছে ১৫ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে যা ১০ হাজার ২৫২ কোটি টাকা ছিল। নতুন সুবিধার ফলে সক্ষমতা থাকলেও অনেকে ঋণ শোধ করবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে ব্যাংকারদের মধ্যে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.