গতকাল বার্মিংহামের একটি বেসরকারি ক্রিকেট একাডেমিতে অনুশীলন ছিল বাংলাদেশ শারীরিক প্রতিবন্ধী দলের। প্রথম ম্যাচের আগে নিজেদের প্রস্তুতিতে কোনো খুঁত রাখতে চায় না দল। কিন্তু ওখানে গিয়েই দেখা গেল অনুশীলনে ব্যস্ত আফগানিস্তান দল। বাংলাদেশ দলকে দেখেই মহা বিরক্ত আফগানরা। সঙ্গে সঙ্গে একাডেমির তত্ত্বাবধায়ককে বলে নেটে নিজেদের বন্দী করল তারা। যেন বাংলাদেশ দল অনুশীলন দেখতে না পারে।
পুরো ব্যাপারটা অগ্রাহ্য করে মূল নেটের বাইরে অপেক্ষালয়ে সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা অনুশীলনের দৃশ্য দেখছিলেন কোচ রাশেদ ইকবালসহ অন্যান্য খেলোয়াড়েরা। কিন্তু সেটা চোখে পড়ে যাওয়াতে মহা ক্ষিপ্ত আফগানরা, অগত্যা সেটাও বাদ দিতে হলো।
শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের অনুশীলনটা হলো দুর্দান্ত। অধিনায়ক দ্রুপম পত্রনবিশ টুর্নামেন্টে ভালো করার ব্যাপারে প্রত্যয়ী। জানালেন, অন্যান্য দলের তুলনায় ঘাটতি থাকলেও সেটা পুষিয়ে নির্দিষ্ট একটা দিনে জ্বলে ওঠা বাংলাদেশের পক্ষে খুবই সম্ভব। তবে ইংল্যান্ডে এসে প্রতিপক্ষদের দেখলে মনে বেশ খানিকটা শঙ্কা জাগা স্বাভাবিক। প্রতিপক্ষ ভারত, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান এমনকি আফগানিস্তানও আগের চেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট নিয়ে অনেক বেশি ভাবছে। এ জায়গায় বলতেই হয়, ঘাটতিটা এখনো উতরে যেতে পারেনি বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক রেডক্রস বা আইসিআরসিই মূলত শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটের মূল উদ্যোক্তা। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) দিয়ে থাকে টেকনিক্যাল সহায়তা, তবে সম্প্রতি বিসিবি নিজেদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটের বিশেষ উইং খুলেছে। এখন থেকে ক্রিকেটের এ শাখায় গতি আসবে বলে আশাবাদটা আছে।
কাল থেকে শুরু হতে যাওয়া ফিজিক্যাল ডিজঅ্যাবিলিটি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট সিরিজে শুরুর দিনই বাংলাদেশের খেলা। প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। বাংলাদেশের শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বললে অবশ্য বোঝার উপায় নেই যে কতটা চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে খেলাটা চালাতে হচ্ছে তাদের। এই আফগানদের বিপক্ষে একবার হারের স্বাদ নেওয়া আছে বাংলাদেশের। এবার তাদের হারিয়ে স্বাদটা বদলাতে চায় তারা। অধিনায়ক দ্রুপম চান জয় দিয়েই শুরুটা করতে, ‘স্বাভাবিকভাবে জয় চাইব। জয় পেলে দলের মানসিকতাটাই অন্যরকম হয়ে যাবে। জানি আফগানিস্তান ভালো দল, কিন্তু আমরাও যথেষ্ট ভালো দল।’
কোচ রাশেদ ইকবাল সামর্থ্য অনুযায়ী খেলার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন, ‘ওরা ভালো খেলোয়াড়, ভালো খেলার সামর্থ্য আছে। ওটাকে কাজে লাগাতে হবে।’ উস্টারশায়ারের ইউনিভার্সিটি অব উস্টারের হোস্টেলে আবাস প্রতিটি দলেরই। সকাল, সন্ধ্যা, রাত মুখোমুখি হচ্ছেন সবাই। খেলোয়াড়দের চোখের দিকে তাকালেই বোঝা যায় কেউ কাউকে ছাড় দিতে একবিন্দু প্রস্তুত নন। ব্যাপারটা এমন যে সাধারণ বন্ধুত্বসুলভ কথাবার্তার মধ্যেও থাকছে কেমন যেন ‘দেখে নেওয়া’র শ্লেষ।
খুব কাছেই বার্মিংহামের এজবাস্টনে চলছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশেজের লড়াই। উস্টারে উত্তাপটা তেমন না হলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আবহটা তো আছেই।