‘করিস নে লাজ, করিস নে ভয়/ আপনাকে তুই করে নে জয়’– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই অমিয় বাণী ধারণ করে শুরু হলো ৩৪তম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসব। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার উদ্যোগে প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা হয় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে।
উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে’ গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করা হয়। এতে অংশ নেন নৃত্যনন্দনের শিল্পীরা। প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে উৎসবের সূচনা করেন সংস্থার নির্বাহী সভাপতি আমিনা আহমেদ। এরপর উপস্থিত সবাই রবীন্দ্রসংগীত গাইতে গাইতে মিলনায়তনে প্রবেশ করেন। সূচনা পর্বে সংস্থার শিল্পীরা পরপর সমবেত কণ্ঠে গাইলেন ‘আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার’ ও ‘দারুণ অগ্নিবাণে রে’।
মিলনায়তনের মূল মঞ্চে ১৬২তম রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত এ উৎসবের মূল পর্ব শুরু হয় দলীয় পরিবেশনায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে। এরপর স্বাগত বক্তব্য দেন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও কণ্ঠশিল্পী পীযূষ বড়ুয়া এবং সভাপতির বক্তব্য দেন আমিনা আহমেদ।
বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা কলিম শরাফী এবং এর অগ্রজদের স্মরণ করে আমিনা আহমেদ বলেন, ‘আমরা খুব উচ্ছ্বসিত আপনাদের উপস্থিতিতে। এটা আমাদের প্রেরণা জোগায়। রবীন্দ্রসংগীত চর্চা, সাধনা এটা যেন সবসময় থাকে। নতুন প্রজন্মের কাছে, আমাদের তরুণদের কাছে যেন বাঙালির সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও রবীন্দ্রচর্চা ছড়িয়ে দিতে পারি, সেজন্য আমাদের এই প্রয়াস।’
সকালের অধিবেশনে দলীয় পরিবেশনায় অংশ নেয় বৈতালিক, বিশ্ববীণা, উত্তরায়ণ, সুরের ধারা, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি (বাফা) ও সংগীত ভবন। তাদের পরিবেশনায় উঠে আসে সম্প্রীতি, প্রকৃতি, কল্যাণ ও আত্মশুদ্ধির বাণী, যা উপস্থিত শ্রোতা-দর্শকের মনে মুগ্ধতা-প্রশান্তির আবেশ ছড়িয়ে দেয়। দলীয় পরিবেশনার শুরুতেই বৈতালিক দুইটি গান পরিবেশন করেন। এই সংগঠনের শিল্পীরা পর পর গাইলেন ‘আকাশভরা সূর্য-তারা’ ও ‘বিশ্বসাথে যোগে যেথায় বিহারো’। এর পর মঞ্চে আসে বিশ্ববীণার শিল্পীরা। তারাও পরিবেশন করেন দুইটি গান। প্রথমটি ছিল ‘মধ্য বিজন বাতায়নে’ এবং দ্বিতীয় গানটি ছিল ‘ফিরে চল মাটির টানে’। এরপর উত্তরায়ণের শিল্পীরা গাইলেন ‘আনন্দেরই সাগর হতে এসেছে আজ বান’। বুলবুল লতিকলা একাডেমি (বাফা) শিল্পীরা শোনান ‘অগ্নিশিখা, এসো এসো, আনো আনো আলো’ ও ‘আমরা নূতন যৌবনেরই দূত’। সুরের ধারার শিল্পীরা পরিবেশন করেন ‘গানের ভিতর দিয়ে যখন দেখি ভুবনখানি’ ও ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে’ এবং সংগীত ভবনের শিল্পীরা শোনান ‘তোমার সুরের ধারা ঝরে যেথায় তারি পারে’ ও ‘তোর আপন জনে ছাড়বে তোরে’। এ ছাড়া একক গান পরিবেশন করেন বীথি বিশ্বাস অন্তরা, শ্রেয়া সাহা ও তাসনিতা মাহবুব নরিন। এই পর্বটি উপস্থাপনা করেন সীমা সরকার।
প্রথম দিনের প্রথম অধিবেশনের সমাপ্তি হয় দুপুর ১২টার দিকে। এর পর কয়েক ঘণ্টার বিরতি দিয়ে প্রথম দিনের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয় বিকেল ৫টায়। মূলত পর্বটি ছিল এবারকার উৎসবের উদ্বোধনী আয়োজন। উদ্বোধন শেষে প্রদান করা হয় গুণীজন সম্মাননা। এ বছর সম্মাননা দেওয়া হয় কিংবদন্তি গিটার শিল্পী এনামুল কবীর ও বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী লিলি ইসলামকে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংস্থার নির্বাহী সভাপতি আমিনা আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক ও কণ্ঠশিল্পী পীযূষ বড়ুয়া।
সম্মাননা পর্ব শেষে সন্ধ্যা ৬টায় ছিল আবৃত্তি ও সংগীতানুষ্ঠান। এই পর্বে একক সংগীত পরিবেশন করেন রফিকুল আলম, এনামুল কবীর, লিলি ইসলাম, মল্লিকা বাগচী, রমা বাড়ৈ, মমিতা মমি, স্বাতী সরকার, রিফাত জামাল, অনুশ্রী ভট্টাচার্য, তনুশ্রী ভট্টাচার্য, আঁখি হালদার, মৃদুল চক্রবর্তী, জয়ন্ত আচার্য, পারভেজ বাধন, শাকিল হাশমি, তমাল চক্রবর্তী, জাফর আহমেদ, সত্যম দেবনাথ, মুস্তাফিজুর রহমান তূর্য, কেশব জিপসি, দেবাশীষ চৌধুরী, মহুয়া মঞ্জুরী সুনন্দা, মোকসেদুল ইসলাম, ফেরদৌসার রহমানসহ আরও অনেকে। আবৃত্তি পরিবেশন করেন ডালিয়া আহমেদ।
উৎসবের দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু হবে আজ বিকেল ৫টায়। এদিনের পরিবেশনায় থাকছে আবৃত্তি ও সংগীত। অনুষ্ঠানের সূচনা হবে সংস্থার শিল্পীদের কণ্ঠে তিনটি গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে।