কক্সবাজারের দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেছেন, তিনি তাঁর আদেশ নিজেই কেটে দিয়েছেন। এই ঘষামাজা ভুল নয়, এটা অপরাধ। এটি করতে তাঁর বুকও কাঁপেনি। একটি অন্যায় ঢাকতে গিয়ে তিনি আরও কয়েকটি অন্যায় করেছেন।
বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এক শুনানিতে এসব কথা বলেন।
আইনশৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে করা এক মামলায় আসামিদের জামিন দেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে আজ হাইকোর্টের এই বেঞ্চে হাজির হন মোহাম্মদ ইসমাইল।
অনিয়ম–অন্যায় যখন জেঁকে বসে তখন কোনো শৃঙ্খলা থাকে না: কক্সবাজারের জেলা জজকে হাইকোর্ট
মোহাম্মদ ইসমাইলের লিখিত বক্তব্যসহ নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি গতকাল বুধবার হলফনামা আকারে হাইকোর্টে দাখিল করেছিলেন তাঁর আইনজীবী। কিন্তু যথাযথ না হওয়ায় তা নতুন করে দাখিলের জন্য সময় চেয়ে গতকালই তাঁর আইনজীবী হাইকোর্টে আরজি জানান। পরে আদালত শুনানির জন্য আজকের দিন রাখেন। আজ সকালে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে নতুন করে একটি আবেদন হাইকোর্টে দাখিল করেন মোহাম্মদ ইসমাইলের আইনজীবী। গতকালের মতো আজও হাইকোর্টে হাজির হন মোহাম্মদ ইসমাইল।
আজকের শুনানিতে মোহাম্মদ ইসমাইলের আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ তাঁর মক্কেলের পক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমার অবেদন হাইকোর্টে উপস্থাপন করেন। মোহাম্মদ ইসমাইলকে অব্যাহতি দেওয়ার আরজি জানান তিনি।
শুনানির একপর্যায়ে হাইকোর্ট মোহাম্মদ ইসমাইলের দেওয়া আদেশের অংশবিশেষ আইনজীবীদের দেখতে বলেন। হাইকোর্ট বলেন, আদেশে কিছু পরিবর্তন করতে হলে সব পক্ষকে ডেকেই করতে হয়। হাইকোর্টে আসার আগেই তিনি তাঁর আদেশ কেটেছেন।
এ সময় মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘আদেশে দুটি শব্দ ভুল হয়েছে। এ জন্য মাফ চাই। দুঃখিত।’
হাইকোর্ট বলেন, ‘আপনি খণ্ডন (আদেশ) করতে চাচ্ছেন? আপনার মনে অনুতাপ দেখি না। আপনি বাধ্য হয়ে বলছেন। অন্তর থেকে আসেনি। অন্তর থেকে আসতে হবে।’
শুনানি চলাকালে আদালতে দাঁড়িয়ে ছিলেন মোহাম্মদ ইসমাইল। একপর্যায়ে তিনি বলেন, তাঁর খারাপ লাগছে। আদালত তাঁকে বসতে বলেন। পরে তাঁকে কপালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকতে দেখা যায়।
শুনানির একপর্যায়ে মোহাম্মদ ইসমাইলের অপর আইনজীবী আদালতে সাত দিনের সময়ের আরজি জানান। আদালত ২৭ জুলাই শুনানির পরবর্তী তারিখ রাখেন।
আজ আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
ঘটনার পূর্বাপর
আবেদনকারী পক্ষ জানায়, জমির দখল নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ভয়ভীতি প্রদর্শন ও আইনশৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে ৯ জনের বিরুদ্ধে খোদেস্তা বেগম নামের একজন কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী দ্রুতবিচার আদালতে নালিশি মামলা করেন। মামলায় আসামিরা হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন। গত ১১ এপ্রিল হাইকোর্ট তাঁদের ছয় সপ্তাহের মধ্যে কক্সবাজারের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন। সংশ্লিষ্ট আদালতে গত ২১ মে আসামিরা দুপুর ১২টার দিকে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। সেদিন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৯ আসামির জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগেই চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আদেশের কপি পাননি উল্লেখ করে সকাল ১০টার দিকে আদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা জামিনের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হলফনামাসহ আবেদন করেন। একই দিন কক্সবাজারের দায়রা জজ ৯ আসামির জামিন মঞ্জুর করেন। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এই আদেশের বিরুদ্ধে খোদেস্তা বেগম হাইকোর্টে আবেদন (ফৌজদারি রিভিশন) করেন।