শখ করে প্রথম ট্রেনে উঠেছিলেন চন্দ্রিমা, হাসপাতালে হাসপাতালে খুঁজে বেড়াচ্ছে পরিবার

0
80
মুঠোফোনে চন্দ্রিমা চৌধুরীর ছবি দেখাচ্ছেন তাঁর ভাইয়ের স্ত্রী অন্তরা বিশ্বাস

গতকাল রাত ৯টার দিকে রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় দুই নারী, এক শিশুসহ অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় দগ্ধ ব্যক্তিসহ তাড়াহুড়া করে নামতে গিয়ে আহত যাত্রীদের আশপাশের হাসপাতালসহ শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়।

চন্দ্রিমাকে খুঁজতে এখন হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছেন পরিবারের সদস্যরা।

রাজধানীর এশিয়ান ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন চন্দ্রিমা। তিনি ফার্মগেট এলাকার ইন্দিরা রোডে ভাই-ভাবির সঙ্গে থাকেন। তাঁর ভাই দিবাকর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) মেডিকেল অফিসার। আর ভাবি অন্তরা বিশ্বাস ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের চিকিৎসক।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন গতকাল বেনাপোল থেকে বেলা দেড়টায় ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে কমলাপুর রেলস্টেশনে এটির পৌঁছানোর কথা ছিল। তবে পথে কিছুটা দেরি হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দিবাকরের সঙ্গে কথা হলো। তিনি বলেন, চন্দ্রিমার সঙ্গে তাঁর সবশেষ যখন কথা হয়, তখন ট্রেনটি ফরিদপুরের ভাঙ্গা এলাকায় ছিল। চন্দ্রিমা বলেছিলেন, ট্রেনটি নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ২০ মিনিট দেরিতে আছে।’

দিবাকর বলেন, ‘কাল আমার বিকালের শিফটে ডিউটি ছিল। ওকে (চন্দ্রিমা) স্টেশন থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য শিফট পাল্টে নিয়েছিলাম। রাত ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছাই। পরে শুনতে পাই ট্রেনের বগিতে আগুন লেগেছে।’

দিবাকর যখন প্রথম আলোর এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন একটু পর পর তাঁর মুঠোফোন বাজছিল। দূর থেকে স্বজনেরা ফোন করে চন্দ্রিমার খোঁজ জানতে চাইছিলেন। দিবাকরের একটাই উত্তর ছিল, ‘না, পাইনি’।

চন্দ্রিমার ভাবি অন্তরা বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, চন্দ্রিমার বাবা নেই। মা রাজবাড়িতে থাকেন। স্নাতকোত্তর শেষ করার পর দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন চন্দ্রিমা।

কথাগুলো বলার সময় চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না অন্তরা।

ঢাকার গোপীবাগে জ্বলছে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন
ঢাকার গোপীবাগে জ্বলছে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন

চন্দ্রিমার চাচাতো ভাই অনিন্দ্য প্রামাণিক বলেন, গতকাল সারা রাত তাঁরা বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ করেছেন, কিন্তু পাননি। ঘটনাস্থলের আশপাশে এমন কোনো হাসপাতাল নেই, যেখানে চন্দ্রিমার খোঁজ করা হয়নি।

অনিন্দ্য বলেন, ‘চন্দ্রিমার ফোনের সবশেষ লোকেশন গোপীবাগ স্টেশনের আশপাশে দেখাচ্ছে। ভোরেও ঘটনাস্থলে খুঁজতে গিয়েছিলাম, কিন্তু খোঁজ পাইনি। পুলিশের সঙ্গেও কথা বলেছি। তারাও কিছুই বলতে পারছে না।’

চন্দ্রিমার নিখোঁজের কথা শোনার পর থেকে রাজবাড়িতে থাকা তাঁর মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন বলে জানালেন তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.