আওয়ামী লীগের সামনে ভোট ও বিএনপির আন্দোলন

0
133
বিরোধী দল বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি থাকলে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি অব্যাহত রেখে মাঠে থাকবে।

পাঁচ সিটির ভোটে দলীয় প্রার্থীর জয় দরকার, বিএনপিকেও রাজনীতির মাঠ দখলের সুযোগ না দেওয়া—দুই দিক চিন্তায় রেখে আওয়ামী লীগের কৌশল।

একদিকে পাঁচ সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত করতে চায় আওয়ামী লীগ, অন্যদিকে বিরোধী দলের আন্দোলনের মুখে মাঠ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টায় থাকবে ক্ষমতাসীন দলটি। দুই দিকই সামলাতে হচ্ছে বলে দলটির নেতারা বলছেন।

বিরোধী দল বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচি থাকলে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি অব্যাহত রেখে মাঠে থাকবে। আর বিএনপির কর্মসূচি না থাকলে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় জোর দেবে। চলতি মে এবং আগামী জুন মাসজুড়েই রাজপথ ও নির্বাচনের মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধী দল তাদের আন্দোলন আরও জোরদার করার চেষ্টা চালাবে, সেটিও বিবেচনায় নিয়ে আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যে পরিকল্পনা করেছে।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানিয়েছেন, চলতি মাসের শুরুতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ তাদের দল এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোকে আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সর্বাত্মক প্রচারে নামার নির্দেশনা দিয়েছিল। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো আলাদা কমিটিও করেছে। তবে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নতুন করে সমাবেশ, মানববন্ধন ও পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করার পর আওয়ামী লীগের কৌশল কিছুটা পাল্টেছে। বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি রাখা হচ্ছে। আর দলের রাজনৈতিক কর্মসূচির ফাঁকে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটির ভোটে জয় চায় দলটি। বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় কিছুটা স্বস্তি ছিল। কিন্তু এখন দলের এবং বিএনপিরও কিছু স্থানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ছে এবং তা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। বিশেষ করে গাজীপুর ও বরিশাল নিয়ে বেশি ভাবছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের মতো বড় দল রাজপথ ও ভোটের মাঠ—দুটিই সমানতালে সামলাবে।

আব্দুর রাজ্জাক, কৃষিমন্ত্রী ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, আওয়ামী লীগ।

দুই দিক সামলাতে জটিলতা

বিএনপি যেখানেই কর্মসূচি পালন করবে, এর পাল্টা হিসেবে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি থাকতেই হবে—এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। সিটি করপোরেশনে জয় যেমন দরকার, তেমনি বিএনপিকে রাজনীতির মাঠ দখলে নেওয়ার সুযোগও দেওয়া যাবে না। কিন্তু সিটি নির্বাচনে দলীয় অংশগ্রহণ নেই বলে বিএনপি আন্দোলনের কর্মসূচি জোরদার করার সুযোগ পাচ্ছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগকে দুটি একসঙ্গে সামলাতে হচ্ছে।

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হবে, এই বিবেচনায় মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরা নির্বাচনের প্রচারে যেতে পারছেন না। ফলে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে যাঁরা সংসদ সদস্য নন, তাঁরাই নির্বাচনী প্রচারে বেশি যাচ্ছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা সমাবেশগুলোতে মন্ত্রী-সংসদ সদস্য নন—এমন নেতাদের উপস্থিতিই বেশি ছিল। এই পরিস্থিতিতে ভোটের প্রচার ও বিরোধী দলের পাল্টা সমাবেশ সফল করতে কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের।

সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ঢাকা মহানগরসহ জেলায় জেলায় টানা কর্মসূচি নিয়েছে বিএনপি।

আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রোজার আগে বিএনপি ঢাকার বাইরে যে কর্মসূচিগুলো নিয়েছিল, এর পাল্টা হিসেবে আওয়ামী লীগও কর্মসূচি পালন করে। শুরুতে কয়েকটি কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাগ করে পাঠানো হয়। পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতি কমে যায়। এখন সিটি নির্বাচনের প্রচারের সময় কেন্দ্রীয় নেতারা আরও কম যেতে পারবেন। ফলে এটা কিছুটা অসুবিধার সৃষ্টি করবে।

ওই নেতা আরও বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন ঢাকার খুব কাছে। ফলে নেতারা নির্বাচনী প্রচার করে আবার দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারছেন। কিন্তু রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও বরিশালে প্রচার শুরু হলে নেতাদের দলীয় কর্মসূচি এবং ভোটের প্রচারে ভাগ করে অংশ নিতে হবে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী-সমর্থক রয়েছেন। ফলে ঢাকায় বা বাইরে যেখানেই দলীয় কর্মসূচি দেওয়া হোক না কেন, তা সফল হবে। আবার যাঁরা নির্বাচনী প্রচারের দায়িত্বে, তাঁরা সেটাও ভালোভাবেই করতে পারবেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সব নির্বাচনকেই গুরুত্ব দেয়। সিটি নির্বাচনের প্রচারেও গুরুত্ব দিয়েছে। আবার বিএনপির সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের প্রতিবাদও অব্যাহত থাকবে।

তবে বাস্তবতা ভিন্ন। ভোটের প্রচার এবং বিরোধী দলের কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি—এই দুই দিক সামলাতে সমস্যা যে হচ্ছে, সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকেই সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার উদাহরণ তুলে ধরেন। তাঁদের দেওয়া উদাহরণ থেকে দেখা যাচ্ছে, ঢাকায় বিরোধী দলের কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচিগুলোতে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর নিয়মিত অংশগ্রহণ থাকত। কিন্তু তাঁকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে তিনি তাঁর লোকজন নিয়ে গাজীপুর দৌড়াচ্ছেন। তিনি আর ঢাকায় দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে থাকতে পারছেন না।

দলীয় সূত্র জানায়, ২৮ সদস্যের এই সমন্বয় কমিটির অন্য সদস্যরাও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা। এর মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান, কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়াসহ নেতারা বিরোধী দলের পাল্টা সমাবেশে নিয়মিত অংশ নিতেন। এখন তাঁদের উপস্থিতি বেশি গাজীপুরের নির্বাচনে। একইভাবে বাকি চার সিটির ভোটেও দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে সব নেতাকে দলীয় কর্মসূচিতে পাওয়া যাবে না।

আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রোজার আগে বিএনপি ঢাকার বাইরে যে কর্মসূচিগুলো নিয়েছিল, এর পাল্টা হিসেবে আওয়ামী লীগও কর্মসূচি পালন করে। শুরুতে কয়েকটি কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাগ করে পাঠানো হয়। পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতি কমে যায়। এখন সিটি নির্বাচনের প্রচারের সময় কেন্দ্রীয় নেতারা আরও কম যেতে পারবেন। ফলে এটা কিছুটা অসুবিধার সৃষ্টি করবে।

‘সমন্বয় করে সামলানোর চেষ্টা’

 আওয়ামী লীগের নেতারা দাবি করেন, তাঁরা সমন্বয় করে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছেন। দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, তিনি নিয়মিত গাজীপুরে ভোটের প্রচারে যাচ্ছেন। সময়-সুযোগমতো দলীয় কর্মসূচিতেও অংশ নিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর মধ্যে যুবলীগ বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি পালন করেছে। ঢাকার বাইরেও সংগঠনটির কর্মসূচি ছিল। গাজীপুর সিটি নির্বাচনের প্রচারেও যুবলীগ যাচ্ছে। অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের তৎপরতাও সামনের দিনগুলোতে বাড়বে।

আওয়ামী লীগের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, তিনি সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত। ফলে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে তিনি বেশি সময় দেবেন। দলীয় কর্মসূচিতেও থাকবেন তিনি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচিতে সতর্ক নজর থাকবে আওয়ামী লীগের। কারণ, তাদের অতীত কর্মকাণ্ড থেকে বোঝা যায়, সুযোগ পেলেই আবার ধ্বংসাত্মক হবে তারা। তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগের মতো বড় দল রাজপথ ও ভোটের মাঠ—দুটিই সমানতালে সামলাবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.