আইডি হ্যাক করাটা এখন ‘ব্যবসা’

0
182
হ্যাকার

ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে, হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়ে ‘আইডি হ্যাক’ করার সেবা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায়ই একটি বার্তা দেখা যায়। সেখানে লেখা থাকে, ‘ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে। বাজে পোস্ট করা হচ্ছে। দুঃখিত।’ মাঝে মাঝে লেখা হয়, ‘কেউ টাকা চাইলে দেবেন না।’

মানুষের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পরিচয় (আইডি বা প্রোফাইল) যে চুরি হয়, তা সবার জানা। কিন্তু অজানা হলো, টাকার বিনিময়ে এই হ্যাক করার (নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়া) অবৈধ সেবা দিতে রীতিমতো ব্যবসা ফেঁদে বসেছে একাধিক চক্র।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চক্রগুলো নিজেদের মুঠোফোন নম্বর দিয়ে পোস্ট দিচ্ছে। নম্বর এখন আঙুলের ছাপ নিয়ে (বায়োমেট্রিক) নিবন্ধিত। ফলে চাইলেই অপরাধীদের শনাক্ত করা সম্ভব।

অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন যোগাযোগমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি কিছু পোস্ট নজরে আসে। যেখানে ফেসবুক, জি–মেইল, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপের মতো মাধ্যমের আইডি হ্যাক করার বিজ্ঞাপন ছিল। হোয়াটসঅ্যাপেও এসেছে এ ধরনের কিছু বার্তা। আবার ‘ফেসবুকে আইডি হ্যাক’ লিখলেই প্রচুর গ্রুপ ও পেজ সামনে আসে।

পুলিশ বলছে, এ ধরনের পোস্টের বেশির ভাগ ভুয়া। পরিচয় চুরি করে দেওয়ার কথা বলে সাধারণত অগ্রিম দেওয়া টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। তবে সেটিও একটি অপরাধ। আর এ ধরনের সেবা যাঁরা নিতে চান, তাঁরাও অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন। অবশ্য কেউ কেউ বলছেন, সব ক্ষেত্রে ভুয়া নয়। সে কারণেই মানুষের পরিচয় চুরির ঘটনা ঘটছে।

 ‘আইডি হ্যাকের’ বিজ্ঞাপন দেওয়া একটি পোস্টে থাকা নম্বরে যোগাযোগ করা হয় গতকাল শনিবার সন্ধ্যায়। সাংবাদিক পরিচয় না দিয়ে ‘ভুক্তভোগী’ পরিচয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। ‘হ্যাকাররা’ জানান, আইডি হ্যাকের জন্য ৯ হাজার ২০০ টাকা দিতে হবে।

 ‘হ্যাক’ মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলতে পারে। সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করতে পারে। প্রতারকেরা অর্থ আত্মসাৎ করতে পারেন। আবার হ্যাক করে উসকানি দেওয়ার মতো কিছু লিখে দিলে সহিংসতাও হতে পারে। ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে দেশে সহিংসতার একাধিক ঘটনা ঘটেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, তাদের কাছে আসা মামলার প্রায় ২৪ শতাংশ ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে (হ্যাক করে) নেওয়ার অভিযোগে করা।

ডিবির এই বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার জুনায়েদ আলম বলেন, অভিযোগ পেলে ডিবি ব্যবস্থা নেয়। সাইবার মনিটরিংয়েও (পর্যবেক্ষণ) যদি এ ধরনের কোনো কিছু চোখে পড়ে, তবে তাঁরা ব্যবস্থা নেন। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) মাধ্যমে তাঁরা ফেসবুককে এসব লিংক সরিয়ে ফেলার অনুরোধ জানান।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবস্থাপনার পোল্যান্ডভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম নেপোলিয়নক্যাটের গত জানুয়ারির হিসাব বলছে, দেশে ৪ কোটি ৬৫ লাখ মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করেন। জি–মেইল, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপের মতো মাধ্যমের ব্যবহারকারী অসংখ্য।

‘হ্যাক’ মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলতে পারে। সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করতে পারে। প্রতারকেরা অর্থ আত্মসাৎ করতে পারেন। আবার হ্যাক করে উসকানি দেওয়ার মতো কিছু লিখে দিলে সহিংসতাও হতে পারে। ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে দেশে সহিংসতার একাধিক ঘটনা ঘটেছে।

অভিযোগ পেলে ডিবি ব্যবস্থা নেয়। সাইবার মনিটরিংয়েও (পর্যবেক্ষণ) যদি এ ধরনের কোনো কিছু চোখে পড়ে, তবে তাঁরা ব্যবস্থা নেন। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) মাধ্যমে তাঁরা ফেসবুককে এসব লিংক সরিয়ে ফেলার অনুরোধ জানান।

ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার জুনায়েদ আলম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন বলেন, রাজনীতিক ও তারকারা নিয়মিত লাইভ করেন, তথ্য শেয়ার করেন ফেসবুকে। ধরা যাক, কোনো রাজনীতিবিদের সঙ্গে শত্রুতা করে কেউ ফেসবুক আইডির নিয়ন্ত্রণ নিলেন। সেখান থেকে বিতর্কিত কোনো পোস্ট দিলেন। এতে তাঁর এলাকায় যেকোনো ঘটনা ঘটে যেতে পারে। কারণ, গুজব ও ভুয়া তথ্য খুব দ্রুত ছড়ায়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চক্রগুলো নিজেদের মুঠোফোন নম্বর দিয়ে পোস্ট দিচ্ছে। নম্বর এখন আঙুলের ছাপ নিয়ে (বায়োমেট্রিক) নিবন্ধিত। ফলে চাইলেই অপরাধীদের শনাক্ত করা সম্ভব।

এ বিষয়ে বি এম মইনুল হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় অনেক তৎপর ছিল। ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা এখন কমে এসেছে। আইডি হ্যাকিং–সংক্রান্ত এ ধরনের চক্রের বিরুদ্ধেও তৎপরতা দরকার।

সুহাদা আফরিন

ঢাকা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.