ভারতের পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও হারল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে প্রোটিয়াদের কাছে ১৩৪ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে অস্ট্রেলিয়ানরা। আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩১১ রান সংগ্রহ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে প্রোটিয়াদের বোলিং তোপে ব্যাটিং ব্যর্থতার চূড়ান্ত প্রদর্শনী দেখিয়ে ৪০.৫ ওভারে ১৭৭ রানে অলআউট হয়েছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। এই হারে পয়েন্ট টেবিলের ৯ নম্বরে অবনমন হয়েছে কামিন্সের দলের। এদিকে টানা দুই ম্যাচ বড় ব্যবধানে জিতে তালিকার সবার ওপরে দক্ষিণ আফ্রিকা।
নিজেদের ষষ্ঠ শিরোপা জয়ের স্বপ্ন নিয়ে ভারত বিশ্বকাপে খেলতে আসে অস্ট্রেলিয়া। ৩১২ রানের লক্ষ্য অস্ট্রেলিয়ার মত দলের জন্য কঠিন কিছুও নয়। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার পেস আক্রমণে শুরু থেকেই ভুগতে থাকেন অজি ব্যাটাররা। অস্ট্রেলিয়ার ওপেনিং জুটি ভাঙে মিচেল মার্শের(৭) বিদায়ে। ২৭ রানে প্রথম উইকেট হারায় তারা। মার্শের পথ ধরে আরেক ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারও ফিরে যান সাজঘরে। ২৭ বলে ১৩ রান করেন তিনি।
দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে লাবুশানের সঙ্গে জুটি গড়েন স্টিভেন স্মিথ। কিন্তু স্মিথ ১৬ বলে ১৯ রানে রাবাদার শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলে ভাঙে এই জুটি। স্মিথের বিদায়ের পর জশ ইংলিশও বেশি সময় থাকতে পারেননি ক্রিজে। রাবাদার দ্বিতীয় শিকার হয়ে ৪ বলে ৫ রান করে তিনিও ফিরে যান। দলীয় ৬৫ রানে কেশব মহারাজের ঘূর্ণিতে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বিদায়ে বেশ বিপদে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। স্কোরকার্ডে ৫ রান যোগ হতেই রাবাদায় ফেরেন স্টয়নিস।
৭০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে লাবুশানে ও স্টার্কের জুটিতে বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে অস্ট্রেলিয়া। এই জুটিতে ভর করে দলীয় সংগ্রহ ১০০ পার করে অস্ট্রেলিয়া। দলীয় ১৩৯ রানে মিচেল স্টার্কের বিদায়ে ভেঙে যায় এই জুটি। লাবুশানেও বেশি সময় থাকতে পারেননি ক্রিজে। অর্ধশতক থেকে ৪ রান দূরে কেশব মহারাজের শিকার হয়ে ৭৪ বলে ৪৬ রান করে ফিরে যান তিনি। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। ৪০.৫ ওভারেই ১৭৭ রানেই গুটিয়ে যায় যারা। আর দক্ষিণ আফ্রিকা তুলে নেয় ১৩৪ রানের বিশাল জয়। প্রোটিয়াদের হয়ে ৩ উইকেট পেয়েছেন রাবাদা। ২টি করে উইকেট পান জানসেন, মহারাজ ও শামসি। লুঙ্গি এনগিডি পান একটি উইকেট।
এর আগে কুইন্টন ডি ককের ঝোড়ো সেঞ্চুরিতে ভর করে ৭ উইকেটে ৩১১ রানের পুঁজি দাঁড় করিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকে নিয়ে শুরুটা দারুণ করেছিলেন ডি কক। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন বাভুমা। দুজনে মিলে গড়েন ১০৮ রানের জুটি। ৫৫ বলে ২ বাউন্ডারিতে বাভুমা ৩৫ রান করে ফিরলেও টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দেখা পান ডি কক।
৫১ বলে ফিফটি পূর্ণ করা উইকেট কিপার এ ব্যাটার তিন অঙ্কে পৌঁছাতে সময় নিয়েছেন মাত্র ৩৯ বল। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৪৭ ম্যাচে এটি তার ১৯তম সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরি তুলে নিলেও নিজের ইনিংস বেশিদূর নিয়ে যেতে পারলেন না ডি কক (১০৯)। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের শিকার হয়ে ফিরে গেলেন সাজঘরে। এর আগে উইকেটে থিতু হওয়ার আগেই জাম্পার ঘূর্ণিতে ফিরেন রাসি ভ্যান ডার ডুসেন (৩৫)।
ডি ককের বিদায়ের পর ক্লাসেনের সঙ্গে জুটি বাঁধেন মার্করাম। এর মাঝেই মার্করান তুলে নেন ব্যক্তিগত অর্ধশতক। ৪১ বলে ৫০ রান করেন তিনি। যার মধ্যে রয়েছে ৬টি চারের মার ও ১টি ছয়ের মার। অর্ধশতকের পর প্যাট কামিন্সের শিকার হয়ে ৪৪ বলে ৫৬ করে ফিরেন মার্করাম। তার বিদায়ের পর রানের গতি কিছুটা হলেও মন্থর হয়ে যায়।
একটা সময় মনে হচ্ছিল তিনশ’ রান করতে পারবে না প্রোটিয়ারা। ক্লাসেন ২৭ বলে ২৯ রান করে সাজঘরে ফেরার পর শেষ দিকে মার্কো জানসেনের ২২ বলে ২৬ রান ও ডেভিড মিলারের ১৭ রানে ভর করে ৭ উইকেটে ৩১১ রান তুলে ইনিংস শেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা।
অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ২ উইকেট নেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ২টি উইকেট নেন মিচেল স্টার্ক, ১টি করে উইকেট নেন জশ হ্যাজেলউড, প্যাট কামিন্স ও অ্যাডাম জাম্পা।