অমৃতপালদের ধরে কেন আসামে পাঠানো হলো

0
182
অমৃতপাল সিং

ভারতের পাঞ্জাবের স্বঘোষিত খালিস্তানি নেতা অমৃতপাল সিং ধরা দিলেন, নাকি তাঁকে ধরা হলো, এ বিতর্কের মধ্যে বড় হয়ে উঠেছে কেন তাঁকে আসামের ডিব্রুগড় জেলে নিয়ে যাওয়া হলো, সে প্রশ্ন।

টানা ৩৭ দিন পলাতক থাকার পর অমৃতপালকে ‘গ্রেপ্তার’ করা নিয়ে পাঞ্জাব পুলিশ কৃতিত্ব নিতে চাইছে। বলছে, পালানোর বিন্দুমাত্র উপায় নেই দেখে ২৯ বছরের খালিস্তানি নেতা প্রতিরোধ করেননি। পুলিশের দাবি, তিনি মোটেই আত্মসমর্পণ করেননি। তাঁকে ধরা হয়েছে। ধরা দিতে বাধ্য হয়েছেন।

কিন্তু কেন অমৃতপালকে অন্য সঙ্গীসাথিদের সঙ্গে আসামে নিয়ে যাওয়া হলো, সে বিষয়ে পাঞ্জাব পুলিশ সরাসরি কিছু বলছে না। যদিও পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রের খবর, যা করা হয়েছে, তা নিরাপত্তার স্বার্থে।

অমৃতপালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে (এনএসএ)। ওই আইনেই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় এ আইনে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার চাহিদা। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) চেয়েছে পাঞ্জাবে না রেখে অমৃতপাল ও তাঁর সঙ্গীদের আসামের ডিব্রুগড় সেন্ট্রাল জেলে নিয়ে যেতে। সেই ইচ্ছা অনুযায়ীই এ ব্যবস্থা।

অমৃতপালের অনুগামী হিসেবে এযাবৎ যাঁদের ধরা হয়েছে, সেই ৯ ব্যক্তিকে আগেই ডিব্রুগড় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই এনএসএতে মামলা হয়েছে। অমৃতপাল হলেন দশম ব্যক্তি। পাঞ্জাব পুলিশের এক বড় কর্তা এ কথা জানিয়ে হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছেন, এনএসএ চেয়েছে, তাই তাঁদের স্থান হয়েছে ডিব্রুগড় জেল। তাঁরা মনে করেছেন, সবদিক খতিয়ে দেখলে এ ধরনের ‘অপরাধীদের’ জন্য ওই জেলই সবচেয়ে নিরাপদ।

ডিব্রুগড় সেন্ট্রাল জেল তৈরি হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে। ১৮৫৯-৬০ সালে। এই জেল দেশের অন্যতম প্রাচীন হলেও এর নিরাপত্তাব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে ভালো। নিরাপত্তার সবদিক খতিয়ে দেখলে দিল্লির তিহার সেরা হলেও অমৃতপালদের সেখানে রাখতে এনআইএ রাজি হয়নি। পাঞ্জাবেও এই স্বঘোষিত খালিস্তানি নেতাকে ও তাঁর অনুচরদের রাখতে চায়নি তারা। এর কারণ একাধিক। পাঞ্জাবের জেলে না রাখার প্রধান কারণ ওই রাজ্যে শিখ সম্প্রদায়ের একাংশের মধ্যে অমৃতপালদের বা খালিস্তানিদের প্রভাব। এনআইএ মনে করছে, সেই প্রভাবমুক্ত নয় পুলিশ ও প্রশাসনের একাংশও। কাজেই নিরাপত্তার খাতিরে পাঞ্জাবে না রাখাই প্রথম সিদ্ধান্ত।

দিল্লির তিহারেও এনআইএ ধৃতদের রাখতে রাজি হয়নি পাঞ্জাবের বহু অপরাধী ও মাফিয়া এই জেলে রয়েছে বলে। জেলে থেকেই ওই অপরাধীরা নানাজনের সহায়তায় তাদের ‘সাম্রাজ্য’ চালিয়ে যাচ্ছে। এনআইএ চায় না ওই অপরাধীদের সঙ্গে অমৃতপালদের কোনো সংযোগ স্থাপিত হোক।

তৃতীয় কারণ, পাঞ্জাবের আম আদমি সরকার। এনআইএ মনে করছে, যেভাবে অমৃতপাল ও তাঁর অনুগামীরা থানা আক্রমণ করে খালিস্তানি অনুগামীদের ছিনিয়ে নিয়েছিল, যেভাবে পুলিশ ও প্রশাসনের একাংশের সহযোগিতায় অমৃতপাল ৩৭ দিন অধরা ছিলেন, তা রাজ্য সরকারের অপদার্থতারই প্রমাণ। এনআইএ রাজ্য সরকারকে সেই পরীক্ষায় দ্বিতীয়বার বসার সুযোগ দিতে চায়নি। আসাম বিজেপি–শাসিত রাজ্য। সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাও যথেষ্ট কড়া প্রশাসক। ডিব্রুগড় সেন্ট্রাল জেল তাই প্রথম পছন্দের। উলফা জঙ্গিদের ঠিকানাও ছিল এই ডিব্রুগড় সেন্ট্রাল জেল।

‘ওয়ারিশ পাঞ্জাব দে’ নেতা অমৃতপালের অনুগামীদের ডিব্রুগড় জেলে নিয়ে যাওয়ার পর নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও বাড়ানো হয়েছে। জেলের এক কর্তা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, যে অংশে খালিস্তানি নেতাদের রাখা হচ্ছে, সেখানে মোট ৫৯টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। জোরালো আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিআরপিএফকে। এনআইএর এক সূত্রের কথায়, তিহারসহ অন্যান্য বড় জেলে অপরাধীদের ভিড় বেশি। তাতে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এ তুলনায় ডিব্রুগড় জেলের বন্দী সংখ্যা যথেষ্ট কম। ৬৮০ জন বন্দীর থাকার বন্দোবস্ত থাকলেও বর্তমানে সেখানে রয়েছেন ৪৩০ জন। ফলে নজরদারির সুবিধা বেশি।

বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর বন্দীদের অন্যত্র রাখার চল বেড়ে যায়; বিশেষ করে সেই সব বন্দী, যাঁদের জাতীয় নিরাপত্তা আইনে বিচার চলছে। আটক কাশ্মীরি নেতাদেরও তাই আগ্রাসহ বিভিন্ন জেলে রাখা হয়েছে। মাওবাদী তাত্ত্বিক নেতাদেরও রাখা হয়েছে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের বাইরে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে। খালিস্তানি নেতাদের আপাতত স্থান তাই ডিব্রুগড় সেন্ট্রাল জেল।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.