অভিনেত্রী সায়নী ঘোষকে একটানা ১১ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেও সন্তুষ্ট হতে পারেনি ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। আবার ৫ জুলাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছে তাঁকে ইডি। এতে সায় দিয়েছে সায়নী ঘোষ।
ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডির ডাকে সাড়া দিয়ে অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় কলকাতার ইডি বা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট’-এর সদর দপ্তর সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির হন। দুপুর ১২টায় ইডির গোয়েন্দারা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। এরপর রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে জিজ্ঞাসাবাদ প্রথম দিনের মতো শেষ করে জানিয়ে দেন, আবার ৫ জুলাই পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এতে সায় দিয়ে রাত ১১টার দিকে বেরিয়ে আসেন সায়নী ঘোষ।
বেরিয়ে এসে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর আরও কিছু কাগজপত্র দেখতে চেয়েছে ইডি। আগামী তারিখে তা পেশ করা হবে। সায়নী আরও বলেছেন, ‘আমি ইডির সঙ্গে শতভাগ সহযোগিতা করেছি। তদন্তের সুবিধার জন্য আমাকে যদি ১০০ বার আসতে হয়, আমি আসব। এখানে আমি সাড়ে ১১ ঘণ্টা ছিলাম। যদি আমাকে ২৪ ঘণ্টা থাকতে হয়, আমি থাকব। আমি ইডির সঙ্গে সহযোগিতা করেছি। আমাকে আরও একবার আসতে হবে।’
ইডি স্কুলশিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে গত জানুয়ারি মাসে যুব তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কুন্তল ঘোষকে গ্রেপ্তার করে। কুন্তল ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, পশ্চিমবঙ্গের স্কুলশিক্ষক নিয়োগে প্রার্থীদের কাছ থেকে অন্তত ২০ কোটি রুপি ঘুষ নেন। সেই টাকার কোনো সুবিধা পেয়েছেন কি না সায়নী ঘোষ, তা জানতেই ইডি সায়নী ঘোষকে তলব করে। কারণ, কুন্তল ঘোষের কাছের লোক ছিলেন এই সায়নী ঘোষ। এই সায়নী ঘোষ কুন্তল ঘোষের সঙ্গে তৃণমূলের বহু সভায় যোগ দিয়েছিলেন। এসব খবর ইডির কানে পৌঁছালে ইডি গ্রেপ্তার করে কুন্তল ঘোষকে।
আর ওই মামলার তদন্তে নেমে ইডির জেরায় উঠে আসে সায়নী ঘোষের নামও। অভিযোগ, কুন্তলের জমিজমা ক্রয়-বিক্রয়সহ অন্যান্য কাজে যুক্ত থাকেন সায়নী ঘোষ। এমনকি তৃণমূলের বিভিন্ন সভায় কুন্তলের সঙ্গে সায়নী ঘোষকেও দেখা যায়।
কুন্তল ঘোষের সঙ্গে সায়নীর সম্পর্ক কী, কুন্তল ঘোষের ঘুষের টাকার কোনো অংশ পেয়েছেন কি না তিনি, সায়নীর কাছ থেকে শিক্ষক নিয়োগের কোনো প্রার্থীর তালিকা পেয়েছেন কি না কুন্তল, সায়নীর সম্পত্তির তালিকা, ১০ বছরের আয়কর প্রদানের কাগজপত্র, ব্যাংক হিসাব ইত্যাদি বিষয়ে জানতে চেয়েছেন ইডির কর্মকর্তারা গতকাল।
এই লক্ষ্যে চার পাতার একটি প্রশ্নমালা তৈরি করে সায়নীকে জেরা করেছে ইডি। তবে জানা গেছে, সায়নী ঘোষ অধিকাংশ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাই আগামী ৫ জুলাই তাঁকে আবার তলব করা হয়েছে।
সায়নী ২০২১ সালে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে বর্ধমানের আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রে তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়ে হেরে যান বিজেপির নারী প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পালের কাছে। সায়নী ঘোষ কলকাতার চলচ্চিত্র ও টিভি অভিনেত্রী। ২০২১ সালে মার্চে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনকালে যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসে।