ভৈরব পৌরসভার এক কাউন্সিলর ও একজন আওয়ামী লীগ নেতা এই বালু তোলায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
মেঘনা নদীর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল ও কিশোরগঞ্জের ভৈরব অংশ থেকে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। এতে নদীসংলগ্ন সরাইলের ১০টি এবং ভৈরবের ৫টি গ্রামের পাড় ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভৈরব পৌরসভার এক কাউন্সিলর ও একজন আওয়ামী লীগ নেতা এই বালু তোলায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরাইলের অরুয়াইল ইউনিয়নের চরকাকরিয়া ও কিশোরগঞ্জের ভৈরবের সাদেকপুর ইউনিয়নের মেন্দিপুর অংশ থেকে খননযন্ত্র (ড্রেজার) দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ছয় থেকে সাতটি খননযন্ত্রের মাধ্যমে প্রায় এক লাখ ঘনফুট বালু তোলা হচ্ছে। যার বাজারমূল্য ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা। বালু তোলার নেতৃত্বে আছেন এক পৌর কাউন্সিলর ও এক আওয়ামী লীগ নেতা। ভৈরব পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোশারফ হোসেন মেসার্স মৌসুমি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক। তাঁর সঙ্গে আছেন ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক এ কে এম মোশারফ হোসেন। সবকিছু জানার পরও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
কাউন্সিলর মোশারফ হোসেন ও আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম মোশারফ হোসেন বলেন, গত বছর তাঁরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বীরগাঁও, বাইশমোজা ও লালপুর বালুমহালের ডাক পেয়েছিলেন। তাঁরা এই ব্যবসা থেকে বের হয়ে গেছেন। বালুমহালের ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বালু ব্যবসায় আর যাননি। স্থানীয় লোকজন না জেনেই অভিযোগ দিচ্ছেন।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক, সরাইল ও ভৈরবের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) জানিয়েছেন, মেঘনা নদীর সরাইল ও ভৈরবের অংশ থেকে বালু তোলার কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত রোববার আশুগঞ্জের মেঘনা নদীর পুরোনো ফেরিঘাট থেকে স্পিডবোটে করে ৪০ মিনিট যাওয়ার পর সরাইল উপজেলার চরকাকরিয়া অংশে ছয়টি খননযন্ত্র দিয়ে বালু তুলতে দেখা গেছে। উত্তোলন করা বালু একাধিক বড় স্টিলের নৌকায় রাখা হচ্ছে। খননযন্ত্রে থাকা একজন জানান, ভৈরবের মোশারফ হোসেন বালু উত্তোলন করছেন। সেখানে ৩৫ থেকে ৪০ জন শ্রমিক উপস্থিত ছিলেন। বালু তোলার কাজটি স্পিডবোটে বসে তিনজন পাহারা দিচ্ছেন। ছবি তুলতে গেলে তাঁরা বাধা দেন। সেখান থেকে তাড়িয়ে দেন।
এভাবে অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলায় সরাইলের মেঘনার পাড়ের দুবাজাইল, রাজাপুর, কাকরিয়া, চরকাকরিয়া, সিঙ্গাপুর, বরইচারা, আজবপুর, নতুনহাটি, পানীশ্বর ও নরসিংহপুর গ্রামের বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভৈরবের কলাপাড়া, ভবানীপুর, মেন্দিপুর, সাদেকপুর, রইন্দাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামেও একই অবস্থা।
সরাইলের চুন্টা ইউনিয়নের আজবপুর বাজারে গিয়ে নদীর পাড়ের ভাঙন চোখে পড়ে। স্থানীয় মো. আবু হানিফ বলেন, দু-তিন বছরে আজবপুর গ্রামের ৮ কানি (৩০ শতকে ১ কানি) জমি ভেঙে নদীতে বিলীন হয়েছে। বালু তোলার কারণে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
নরসিংহপুর গ্রামের বাসিন্দা মিজান মিয়ার আজবপুর গ্রামে জমি রয়েছে। তিনি বলেন, তিন কানির মধ্যে এক থেকে দেড় কানি জমিই ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আবুল বাশার বলেন, ভৈরব পৌরসভার কাউন্সিলর মোশারফ হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম মোশারফসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বালু ব্যবসায়ীরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের কথা বলে মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলছেন। প্রতিদিন এক লাখ ঘনফুট বালু তুলছেন তাঁরা।
সরাইলের ইউএনও মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন বলেন, ভৈরবের আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য এখান থেকে মাটি নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। তবে এর জন্য তাঁরা কোনো অনুমোদন নেননি। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভৈরবের ইউএনও মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান বলেন, মেঘনা থেকে বালু তোলার কোনো অনুমতি কাউকে দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে রোববার বিকেলে মেঘনায় লোক পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে মেঘনার সরাইলের চরকাকরিয়া এবং ভৈরবের মেন্দিপুর থেকে বালু তোলা হচ্ছে বলে জানতে পেরেছেন।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, বালু তোলার কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।