অবশেষে বেসিক ব্যাংকের আবদুল হাইকে আসামি করল দুদক

0
171
শেখ আবদুল হাই ওরফে বাচ্চু

অবশেষে বেসিক ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে আসামি করে অভিযোগপত্র অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দীর্ঘ আলোচনা-সমালোচনার পর দুদক আজ সোমবার বেসিক ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ-সংক্রান্ত ৫৯টি মামলার অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করে। এর মধ্যে শেখ আবদুল হাইকে ৫৮টিতে আসামি করা হয়।

দুদক জানিয়েছে, শেখ আবদুল হাইসহ বেসিক ব্যাংকের ৪৬ জন ব্যাংক কর্মকর্তা এবং ১০১ জন গ্রাহককে এসব মামলায় আসামি করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে ২ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। দুদকের পাঁচজন কর্মকর্তা দীর্ঘ তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দেন। এসব মামলার অভিযোগপত্র আদালতে উপস্থাপনের জন্য আজ অনুমোদন দেয় দুদক।

এ বিষয়ে দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেন আজ দুপুরে সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। তিনি জানান, শিগগিরই অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হবে।

সরকারি খাতের ভালো ব্যাংক হিসেবে একসময় পরিচিত ছিল বেসিক ব্যাংক। এই ব্যাংকে লুটপাট শুরু হয় আবদুল হাই চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই। ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে। ব্যাংকটির ঋণ কেলেঙ্কারি ও অনিয়ম নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ১৫৬ জনকে আসামি করে ৫৬টি মামলা করে। তবে মামলায় আবদুল হাইকে আসামি করা হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে শেখ আবদুল হাই বাচ্চু বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে ২০১৩ সালের মার্চ পর্যন্ত ৬ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকাই নিয়ম ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে বিষয়টি ধরা পড়ে। ফলে ২০১৪ সালে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অপসারণ করা হয়। সে বছরের ২৯ মে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিছুদিন পর ৪ জুলাই শেখ আবদুল হাই বাচ্চু পদত্যাগপত্র জমা দেন।

ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবতে বসা বেসিক ব্যাংকের ২০২১ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর দায়িত্বকালটা ‘অস্বস্তির’ ছিল। অনিয়মের অভিযোগে ২০১৩ সাল থেকে অনুসন্ধানে নামে দুদক। পরে  ২০১৫ সালের ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর তিন দিনে টানা ৫৬টি মামলা করে সংস্থাটি। পরে ২০১৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আরও ৩টি মামলা যোগ হয়। এসব মামলায় আসামি করা হয় ১৫৬ জনকে।

আবদুল হাই ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাট-১ আসন (চিতলমারী, মোল্লাহাট ও ফকিরহাট) থেকে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাঁকে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া দেয়। বর্তমান সরকারের ওপর মহলের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকার বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচিত।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.