জমি নিবন্ধনের খরচ তথা করের পরিমাণ পুনর্নির্ধারণ করেছে সরকার। নতুন নিয়মে মৌজা ভিত্তিতে করহার নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে এলাকাভেদে অনেক স্থানের ভূমি নিবন্ধন কর কমেছে। একই সঙ্গে আবাসন কোম্পানি বা ভূমি উন্নয়নকারীর কাছ থেকে বাণিজ্যিক ও আবাসিক প্লট এবং অন্য জমির করের হারও হালনাগাদ করা হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত মঙ্গলবার এ নিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকা ও এর বাইরে অবস্থিত জমিকে মৌজা অনুযায়ী ক থেকে ঙ—এই পাঁচ শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এসব এলাকায় এখন থেকে নতুন হিসাবে জমি বিক্রির উৎসে কর আদায় করা হবে।
রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, এত দিন সব ধরনের জমি নিবন্ধনে একই হারে কর ছিল। এখন মৌজার অবস্থান অনুসারে জমির শ্রেণিবিভাগ করে কর নির্ধারণ করা হয়েছে। তাতে স্থানভেদে কাঠাপ্রতি সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত কর কমেছে। ফলে এ নিয়মে জমি কেনাবেচার ক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই লাভবান হবেন।
এনবিআরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ‘ক’ শ্রেণির মধ্যে রয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন বাণিজ্যিক এলাকা। আর ‘ক’ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত সংস্থাগুলোর নিয়ন্ত্রণাধীন আবাসিক এলাকাগুলোকে রাখা হয়েছে ‘খ’ শ্রেণিতে।
অন্যদিকে ক-শ্রেণিতে উল্লেখিত সংস্থাগুলোর নিয়ন্ত্রণে নেই কিন্তু আবাসন কোম্পানি বা ভূমি উন্নয়নকারী প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্যিক এলাকাকে রাখা হয়েছে ‘গ’ শ্রেণিতে। এসব স্থানের (গ শ্রেণিভুক্ত) আবাসিক এলাকাকে রাখা হয়েছে ‘ঘ’ শ্রেণিতে। আর ক, খ, গ, ঘ—ছাড়া বাকি সব জমিকে ‘ঙ’ শ্রেণিতে রাখা হয়েছে।
নতুন নিয়মে রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় জমি নিবন্ধনে করের পরিমাণ কমেছে। যেমন বর্তমানে ঢাকার গুলশান, বনানী ও মতিঝিল এলাকায় বাণিজ্যিক জমির ক্ষেত্রে দলিলে উল্লেখিত জমির মূল্যের ৮ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ২০ লাখ টাকা, যেটি বেশি হয়, সেই হারে উৎসে কর ধার্য ছিল। নতুন প্রজ্ঞাপনে এসব এলাকায় বাণিজ্যিক জমির ক্ষেত্রে (ক শ্রেণি) জমির মূল্যের ৮ শতাংশ বা ১৫ লাখ টাকা উৎসে কর নির্ধারণ করা হয়েছে। আবার ঢাকার শাহবাগ এলাকার মৌজার বাণিজ্যিক জমির (ক শ্রেণি) কর ছিল কাঠাপ্রতি জমির মূল্যের ৮ শতাংশ বা ১২ লাখ টাকা। নতুন নিয়মে তা ১০ লাখ টাকা করা হয়েছে।
অন্যদিকে একই এলাকায় হলেও জমির শ্রেণি অনুযায়ী পৃথক করহার নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন ঢাকা জেলার ধানমন্ডি, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, রমনা, পল্টন, নিউমার্কেট ও কলাবাগান থানার অন্তর্গত মৌজার ক্ষেত্রে ক ও গ শ্রেণির জমির নিবন্ধন কর কাঠাপ্রতি ১০ লাখ টাকা এবং খ ও ঘ শ্রেণির করহার ৪ লাখ টাকা করা হয়েছে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে এসব এলাকা বাদে অন্যান্য সিটি করপোরেশন ও জেলা সদরে জমি নিবন্ধনে জমির দামের ৬ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। এর বাইরে অন্য যেকোনো পৌরসভায় ৪ শতাংশ ও বাকি সব উপজেলায় ২ শতাংশ হারে জমি নিবন্ধন কর দিতে হবে গ্রাহকদের।
জমি ছাড়াও যেকোনো আবাসন কোম্পানি কর্তৃক বা ব্যক্তিপর্যায়ে নির্মিত ভবন ও অ্যাপার্টমেন্ট (বাণিজ্যিক বা আবাসিক) হস্তান্তরের ক্ষেত্রে নতুন করহার নির্ধারণ করেছে রাজস্ব বোর্ড।