অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদের নেতৃত্বে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের নতুন ‘থিঙ্কট্যাংকের’ আত্মপ্রকাশ

0
139
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ের শিক্ষক-গবেষকদের সমন্বয়ে ‘বাংলাদেশ পলিটিক্যাল সায়েন্স নেটওয়ার্ক (বিপিএসএন)’ নামে নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ হয়েছে

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ের শিক্ষক-গবেষকদের সমন্বয়ে ‘বাংলাদেশ পলিটিক্যাল সায়েন্স নেটওয়ার্ক (বিপিএসএন)’ নামে নতুন একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদের নেতৃত্বে গঠিত এ সংগঠন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের ‘থিঙ্কট্যাংক’ হিসেবে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে। সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে অধ্যাপক হারুন বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনসহ সব স্তরে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে। তবে এর জন্য সব পক্ষেরই ভূমিকা থাকা প্রয়োজন।

গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর আনন্দবাজারে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সম্মেলনকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিপিএসএনের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেওয়া হয়। সেখানে অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদকে সভাপতি ও একই বিভাগের আরেক অধ্যাপক সাব্বীর আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ২১ সদস্যের একটি কমিটিও ঘোষণা করা হয়। এ কমিটি আগামী দুই বছর (২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫) দায়িত্ব পালন করবে।

নবগঠিত সংগঠন বিপিএসএনের প্রথম কমিটিতে সহসভাপতি হিসেবে আছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসেন, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রামের উপাচার্য মাহফুজুল হক চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগরের অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানউজ্জামান ও বাংলা একাডেমির সাবেক পরিচালক জালাল ফিরোজ। যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোবিন্দ চক্রবর্তী, কোষাধ্যক্ষ হয়েছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহাম্মদ সোহরাব হোসেন। কমিটিতে প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক করা হয়েছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক শরীফ আহমেদ চৌধুরীকে। এ ছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন শিক্ষক এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিপিএসএনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রভৃতি বিষয়ে আলোকপাত করেন সভাপতি হারুন-অর-রশিদ। তিনি বলেন, এটি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি পেশাদার সংগঠন। এটা রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের থিঙ্কট্যাংক হিসেবে কাজ করবে। এ সংগঠন জ্ঞানের চর্চাকে উৎসাহিত করবে। জ্ঞানের চর্চা, বিনিময় ও বিতরণের মধ্য দিয়ে দেশ ও জাতি যেন উপকৃত হতে পারে, সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমরা চাই, একটা সুস্থ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ গড়ে উঠবে এবং সেই ধারা চলমান থাকবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে মতপার্থক্য থাকলেও তা নিরসনের একটা প্রক্রিয়া থাকবে।

অধ্যাপক হারুন বলেন, বিপিএসএনের মূলমন্ত্র হচ্ছে ‘জ্ঞানই শক্তি’। এ সংগঠনের প্রধান লক্ষ্য হলো রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক-গবেষকদের পেশাদারত্ব ও জ্ঞানগত উৎকর্ষ বাড়ানো, ১৯৭২ সালের সংবিধানের মৌলিক আদর্শ অনুসরণ, মুক্তচিন্তার বিকাশ, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান-কাঠামো গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন, শান্তিপূর্ণ পন্থায় রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ, সমতাভিত্তিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, নির্বাচনের স্বচ্ছতার আবশ্যকতা তুলে ধরা, জনগণের ক্ষমতায়ন ও প্রগতিশীল আকাঙ্ক্ষা পূরণে সহায়ক ভূমিকা, সাংঘর্ষিক রাজনীতির আবর্ত থেকে বাংলাদেশের বের হওয়ার পথ অনুসন্ধান ইত্যাদি।

বিপিএসএনের সভাপতি অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সাব্বীর আহমেদ। ২১ সদস্যের এ কমিটি আগামী দুই বছর (২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫) দায়িত্ব পালন করবে
বিপিএসএনের সভাপতি অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সাব্বীর আহমেদ। ২১ সদস্যের এ কমিটি আগামী দুই বছর (২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫) দায়িত্ব পালন করবে

সুশাসনের জন্য আইনের শাসন দরকার বলে মত দেন অধ্যাপক হারুন। বাংলাদেশের রাজনীতি প্রসঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হারুন-অর-রশিদ বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে গেছে। এর কারণে বাংলাদেশের রাজনীতি একটা সাংঘর্ষিক রূপ লাভ করেছে। নির্বাচন এলে এটা ঘনীভূত হয়। এ ছাড়া সারা বছরই এটা দেখা যায়। বাংলাদেশের রাজনীতি সাংঘর্ষিক কেন, এটা নিয়ে গবেষণা হওয়া দরকার। এ ধরনের রাজনীতি থাকলে সেখানে কনসেনসাস গড়ে ওঠার সম্ভাবনা কম থাকে এবং রাজনীতি সহিংসতার আশ্রয় নেয়। সাংঘর্ষিক রাজনীতি থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজতে হবে।

এ সময় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর গুরুত্বারোপ করে হারুন-অর-রশিদ বলেন, নির্বাচন স্বচ্ছ করা নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব। একই সঙ্গে এটা জনগণ ও রাজনৈতিক দলেরও দায়িত্ব। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকলে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডও হবে না। জনগণের শক্তিই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নির্ধারণ করতে পারে। এর সহায়ক হিসেবে আইনকানুন তো আছেই। নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে এটা সম্ভব নয়। এমনকি সুজনের মজুমদার সাহেবকেও (সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার) যদি বসিয়ে দেওয়া হয়, তিনিও পারবেন না। এখানে সবার ভূমিকা লাগবে। আমরা চাই, জাতীয় নির্বাচনসহ সব স্তরে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এবং দেশে একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।

সংবাদ সম্মেলনে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিপিএসএনের যুগ্ম সম্পাদক গোবিন্দ চক্রবর্তী। আরও বক্তব্য দেন বিপিএসএনের সাধারণ সম্পাদক সাব্বীর আহমেদ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.