অগ্নিকাণ্ডের পাঁচ দিনেও ভিটেমাটিতে ফিরতে পারেনি ২৪টি পরিবার

0
153
পোড়া ভিটেমাটিতে রান্না করার চেষ্টা করছেন দুই নারী। শুক্রবার সকালে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বাঁশিলা উত্তরপাড়ায়

নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বাঁশিলা উত্তরপাড়ায় অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া ২৪টি বাড়ির বাসিন্দারা পাঁচ দিনেও নিজেদের ভিটেমাটিতে ফিরতে পারেননি। আশপাশের বাড়ির ছাদে, আঙিনায় ও গাছপালার নিচে বসবাস করছেন তাঁরা। গৃহনির্মাণসামগ্রীর সংকট এবং দীর্ঘদিনের ভূমি বিরোধের কারণে তাঁরা নতুন করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করতে পারছেন না। ফলে এসব পরিবারের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ইয়াদুল ইসলাম বলেন, নতুন করে শোবার ঘর, রান্নাঘর ও শৌচাগার নির্মাণ করা না হলে বসবাস শুরু করা যাবে না। এসব করতে এখন নির্মাণসামগ্রী ও নগদ টাকা দরকার, যা তাঁদের কাছে নেই। তিনি আরও বলেন, পুড়ে যাওয়া ভিটার আদি মালিক ছিলেন ঝড় প্রামাণিক, ছইর প্রামাণিক ও জমির প্রামাণিক। ঝড় প্রামাণিক মারা গেলে তাঁর চার ছেলে বরকত প্রাং, সেকেন্দার প্রাং, বাদেশ প্রাং ও আদেশ প্রাং বসবাস করতেন। ছইর প্রামাণিক মারা যাওয়ার পর তাঁর পাঁচ ছেলে নাজির প্রাং, উজির প্রাং, উকিল প্রাং, হাকিম প্রাং ও মুক্তার প্রাং বসবাস করতেন। জমির প্রাং মারা যাওয়ায় তাঁর দুই ছেলে খলিল প্রাং ও অলিল প্রাং বসবাস করছিলেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে জমি ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়নি। যে যাঁর মতো কাঁচাঘর নির্মাণ করে বসবাস করছিলেন।

পোড়া ঘরবাড়ি ঘুরে দেখছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। শুক্রবার সকালে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বাঁশিলা উত্তরপাড়ায়
পোড়া ঘরবাড়ি ঘুরে দেখছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। শুক্রবার সকালে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বাঁশিলা উত্তরপাড়ায়

বাঁশিলা উত্তরপাড়ার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রান্নার চুলার আগুন থেকে গত রোববার বিকেলে ২৪টি পরিবারের বসতবাড়ি পুড়ে গেছে। বাড়িগুলো একটির সঙ্গে অন্যটি লাগোয়া। ফলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

আজ শুক্রবার সকালে বাঁশির উত্তরপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছুই পুড়তে অবশিষ্ট নেই। ভুক্তভোগীরা আশপাশের বাড়িগুলোতে কোনোমতে ঠাঁই নিয়েছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা জানান, স্থানীয় প্রশাসন, রাজনীতিবিদ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যে সহায়তা দিয়েছে, তা পর্যাপ্ত নয়। নতুন করে ঘরবাড়ি নির্মাণে অর্থসংকট একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া কারও কারও বাড়ির জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ আছে। এ বিরোধ নিষ্পত্তি না হলে কাউকে নতুন করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

বিধ্বস্ত বাড়ির ভিটায় পুড়ে যাওয়া বই হাতে দাঁড়িয়ে কিশোরী আফরোজা খাতুন। বৃহস্পতিবার সকালে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বাঁশিলা উত্তরপাড়ায়
বিধ্বস্ত বাড়ির ভিটায় পুড়ে যাওয়া বই হাতে দাঁড়িয়ে কিশোরী আফরোজা খাতুন। বৃহস্পতিবার সকালে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বাঁশিলা উত্তরপাড়ায়

ঝড় প্রামাণিকের নাতি আফছার প্রাং বলেন, নিজেদের ভূমি বিরোধের কারণে সামর্থ্য থাকার পরও তাঁরা পাকাঘর নির্মাণ করতে পারেননি। যে যাঁর মতো পুরো জমি (প্রায় দেড় বিঘা) দখল করে টিনের বাড়িঘর নির্মাণ করেছিলেন। এ কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। আগুন নেভানো সম্ভব হয়নি। তাই এবার তাঁরা জমি ভাগ-বাঁটোয়ারা না করে নতুন করে বাড়িঘর করবেন না।

শত কষ্ট হলেও এবার জমি ভাগ না করে কাউকে বাড়ি করতে দেবেন না বলে সাফ জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত গৃহবধূ বেলা বেগম।

এ বিষয়ে স্থানীয় মাধনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার বলেন, বাড়িঘর হারিয়ে ২৪টি পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে। নতুন আবাসন নির্মাণ করে তাঁদের বসবাসের ব্যবস্থা করার জন্য সবকিছুই করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভূমি বিরোধ মেটানো নিয়েও আলোচনা চলছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.